শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৪:১৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৪:১৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বরগুনায় মোবাইলে আসক্ত শিশু-কিশোররা, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

মো: সাগর আকন:[২] মোবাইল নামটা শুনলেই হল। একবার হাতে পাওয়ার জন্য কত যে বায়না, কত যে কান্না। না দিলে জেদ আরও বেড়ে যায়। আর হাতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে বুঁদ মোবাইলের স্ক্রিনে। দুধের শিশুও আজকাল মোবাইলে ভিডিও বা ছবি না দেখে খেতে চায় না। নার্সারির বাচ্চাগুলো মোবাইল গেমসে মুখ গুঁজে। বারণ করলে বাড়িতে বেধে যায় যুদ্ধ। আবার অনেক মা নিজের কাজ গোছানোর ব্যস্ততায় শিশুর হাতে তুলে দেন মোবাইল। প্রায় সব বাড়িতেই এক দৃশ্য।

[৩] স্কুল-কলেজে ছুটির ঘণ্টা, এরপর বাড়ি ফিরে কিছু খেয়েই একদৌড়ে মাঠে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন খেলায় মগ্ন থাকতো শিশু-কিশোররা। তবে সেদিন যেন ফুরিয়ে এসেছে এ করোনাকালে। এখন বাসায় বসে মোবাইলে গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা।

[৪] জানা যায়, বরগুনাসহ সারাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাঠগুলো এখন যেন গবাদি পশুর চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। মাঠে নয়, শিশু-কিশোরদের এখন দেখা যায় রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে বা কোনো নির্জনস্থানে। এদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গদোষে তলিয়ে যাচ্ছেন মাদকের দুনিয়ায়। এতে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। তবে এর থেকেও বড় আকারে দেখা দিয়েছে স্মার্টফোন আসক্তি। এ আসক্তি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে তাদের মনের বিকাশে ও চরিত্র গঠনে। প্রায় সবার হাতেই শোভা পাচ্ছে স্মার্টফোন।

[৫] এছাড়া আগে গ্রামে বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট হতো, যাতে নিজ গ্রামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করত কিশোররা। টুর্নামেন্টে দলের শক্তি বাড়াতে জেলা, বিভাগ বা রাজধানী শহরের নামিদামি বিভিন্ন ক্লাব আর অ্যাকাডেমি থেকে খেলোয়াড় ভাড়া করেও আনা হতো। আর থাকতো গ্রামের খেলোয়াড়রা। তবে এখন চিত্র পুরোপুরি উল্টো। টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে অংশ নেয়া দলগুলো ভাড়ার খেলোয়াড় দিয়েই একাদশ সাজায়। গ্রাম বা মহল্লার খেলোয়াড় থাকে মাত্র দুই-একজন। কারণ গ্রামের কিশোরদের নেই খেলায় তেমন আগ্রহ। এতে তৈরি হচ্ছে না ভালো খেলোয়াড়।

[৬] বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম. এ. আজিম বলেন, ‘গ্রামে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আগের মতো নেই। মাঠপর্যায়ে তেমন সংগঠকও নেই। পৃষ্ঠপোষকতাও মিলছে না সেভাবে। খেলাধুলায় শিশু-কিশোরদের বিকাশে এটা বিরাট অন্তরায়। দায় পরিবারেরও রয়েছে। সন্তানের হাতে যদি ফুটবল, ব্যাট তুলে দেয়া না হয়, মাঠে পাঠানোর তাগিদ না দেয়া হয়, তাহলে তো তারা ঘরে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়েই সময় কাটাবে।’এদিকে মোবাইলে আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

[৭] শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ বরগুনা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো: সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘একটি শিশু মস্তিষ্কের যে অংশটা যে দিকে খাটাবে, ওই অংশটাই কেবল বিকশিত হবে। বাকি অংশগুলো আর বিকশিত হয় না। তাদের ক্ষেত্রেও এমন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন লক্ষণ দেখা যায়, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে আসক্তির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তাদের বিকাশ ঠিকভাবে হচ্ছে না। এবং বিশেষ করে ফ্রি ফায়ার, পাবজি নামের এরকম গেমস গুলি শিশুদের যেমনি মস্তিষ্কের ক্ষতি করছি তেমনি ভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে এটা বড় একটা অন্তরায়।’

[৮] তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছেলেমেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে আবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন ডিভাইস দখল করে নিয়েছে খেলাধুলার স্থান। আগে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক খেলাধুলার আয়োজন করা হতো, এখন সেগুলোও বন্ধ। শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই সবারই এক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়া দরকার।’

[৯] আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, 'কয়েক বছর ধরেই শিশু-কিশোরদের অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে। করোনার সময় এটি আরও বেড়েছে। আসক্ত শিশু-কিশোররা কল্পনায় একটি কৃত্রিম জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। হতাশা গ্রাস করছে তাদের। কোভিড পরিস্থিতে অভিভাবকরা সন্তানদের মাসের পর মাস চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হবে।’

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়