শিরোনাম
◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৩:২২ রাত
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২১, ০৩:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাঈদ তারেক: লকডাউন শিথিল করায় সরকারকে ধন্যবাদ!

সাঈদ তারেক: অনেক দিন পর সরকারকে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেলো। আপাতত বিধিনিষেধ শিথিল করে শর্তসাপেক্ষে সব কিছু খুলে দিচ্ছে। এতে মানুষ অন্তত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। আসলে লকডাউনের নামে মানুষকে জবরদস্তি করে ঘরে আটকে রাখা যে ডেল্টা মোকাবেলায় কোনো কার্যকর পদ্ধতি নয়, এটা বহুবার বলা হয়েছে। এতে আরও সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থাকে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। তেরো দিন যাবৎ কঠোর লকডাউন, তেরো দিনই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা লফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয় পরিস্থিতির উন্নতিতে এই ফর্মূলা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের কাজকারবার দেখে মনে হয় তারা সব বিদেশ থেকে আগত। সমাজ কাঠামো মানুষের জীবন-জীবিকা, চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে বাস্তব কোনো ধারণাই যেন নেই। তারা দেশ বলতে বোঝে ঢাকা শহর আর জনগণ বলতে নিজেদের শ্রেণি-গোষ্ঠীর লোকজনকে। ফলে সকল পরিকল্পনা রচিত হয় এই ঢাকা এবং প্রধানত এই শহরে বসবাসকারী সুবিধাভোগীদের স্বার্থ রক্ষা করে। এর বাইরে যে দেশ রয়েছে বা আরো ১৬ কোটি মানুষ আছে এটা যেন হিসাবেই থাকে না। আমি জানি না এসব নীতি নির্ধারক কারা তবে তাদের প্রণীত নীতি পলিসিতে বাস্তবতা এবং সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন খুব কমই পাওয়া যায়। এতে করে জনদুর্ভোগ কমে না, বেড়েই চলে।

সরকার যদি আমলা নির্ভর হয়ে পড়ে তখনই এমনটা ঘটে। আমলা নির্ভর সরকার কখনো জনবান্ধব হয় না। করোনা মোকাবেলায় সরকারের একটি পরামর্শক কমিটি আছে। লকডাউনের মতো অবাস্তব এসব পরামর্শ তারাই নাকি দেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন আমাদের দেশের মতো অনুন্নত এবং ঘনবসতিপূর্ণ অসচেতন জনগোষ্ঠীর জন্য পশ্চিমা ধাঁচের লকডাউন কোনো কার্যকর পদ্ধতি নয়। গত বছর থেকে বেশ কয়েকবারই এমন লকডাউন চালানোর চেষ্টা হয়েছে। পারা যায়নি। চলতি কঠোর লকডাউনও আর্মির ভয়ে প্রথম তিন চারদিন হালকা বজায় থাকলেও এরপর থেকে ডালভাত হয়ে গেছে। আবার সেই ট্রাফিক জ্যাম। শুধু বাস-মিনিবাস, অটো বাদে সবই আছে। মাঝখান থেকে মামলা, গ্রেপ্তার, জরিমানার নামে সরকারের, সেই সঙ্গে কিছু হারামখোরের ঈদ বোনাস কামাই হয়ে গেছে।

দুর্ভোগে পড়েছে সারা দেশের আমজনতা। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। সরকারি চাকুরেরা হয়তো তিরিশ তারিখে বেতন ভাতা নিয়ে ঘরে গিয়ে উঠেছেন, এখন পুরো মাস লকডাউন থাকলে তাদের বরং সুবিধা, কিন্তু লাখ লাখ বেসরকারি অফিস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, পরিবহন কল-কারখানা দোকানপাটের কোটি কোটি শ্রমিক কর্মচারি যারা পাঁচ তারিখ থেকে বেতন পেতে শুরু করেন তারা ফেঁসে গেলেন। তাদের অফিস বন্ধ কর্মস্থল বন্ধ। মালিকদের আয় রোজগার বন্ধ। মাসের বেতন সামনে ঈদ, কিভাবে এসব পরিশোধ হবে! বেতন না পেলে এই মানুষগুলো কিভাবে চলবে, বাঁচবে! পরামর্শক কমিটি যখন পরামর্শ ফাঁদেন, এসব কি বিবেচনায় আনেন! আর একটি শ্রেণি আছে- নিরাপদ আয় নিরাপদ জীবন, কোনো কাজ নেই অবসর বা বেকার সময় কাটে টিভি দেখে, ফেসবুক গুতিয়ে, করোনার ভয়ে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকেন, ছয় মাসে একবার বাইরে হন না। তারাই লকডাউন লকডাউন করে মাতামাতিটা বেশি করে থাকেন। রাস্তায় মানুষ চলতে দেখলেই মাতম করে ওঠেন। মানতেই চান না যে পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার যোগানো ঘরভাড়া বিলবাট্টা অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাওয়া ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে মানুষকে রাস্তায় বের হতে হয়, পাওনা টাকা আদায় বা ধারের জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করতে হয়, জরুরি কেনাকাটা ওষুধ কেনা বা অসুস্থতায় হাসপাতাল ডাক্তারের কাছে যেতে হয় এবং তারা সংখ্যায় কোটি কোটি। তারাই জনগণ। তারাই দেশ। ওই শ্রেণিটির ভাবনা, জনগণ জাহান্নামে যাক শুধু তারা বেঁচে থাকলেই হলো। এরা মনে করে মানুষ পথে বের হয়েই করোনা ছেড়ে দেবে আর সেই করোনা খুঁজে পেতে ঘরে এসে তাদের ঘাড় মটকে দেবে! একেই বলে শ্রেণিস্বার্থ চিন্তা।
পনেরো তারিখ থেকে বিধিনিষেধ শিথিল। সরকারি ভাষায় যাই বলা হোক কার্যত সেদিন থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ওঠে যাবে। সীমিত পরিসরে গণপরিবহন লঞ্চ ট্রেন চললে এবং তাতে যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বা এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়। আসন্ন ঈদে মানুষের ঘরে ফেরাটা স্বস্তিদায়ক হবে, তাতে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে। সেই সঙ্গে এসব সেক্টরের লাখ লাখ শ্রমিক কর্মচারির বেতন ভাতাটা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। মার্কেট খুললে শ্রমিক কর্মচারিরাও তাদের পাওনা পাবেন। বলা হয়েছে, শিথিলতা বাইশ তারিখ পর্যন্ত। ঈদের ছুটি এবং তার রেশ তিরিশ তারিখ পর্যন্ত থাকবে। কাজেই এর মধ্যে আর কঠোরতার প্রয়োজন পড়বে না। মানুষ চলাচল এমনিতেই কম থাকবে। একটা পূর্বাভাস আছে, পঁচিশ তারিখে নাকি সংক্রমণ এবং মৃত্যু পিকে গিয়ে ঠেকবে। সে সংখ্যা কতো হবে কেউ জানি না। তবে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় সে ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আপাতত তথাকথিত লকডাউন যে শিথিল করা হয়েছে সে জন্য সরকারকে সাধুবাদ। আর একটা কথা- পরামর্শক কমিটি নাকি পনেরো তারিখ থেকে কারফিউ জারির পরামর্শ দিয়েছিলো! এই অবাস্তব এবং আত্মঘাতি পরামর্শ গ্রহণ না করার জন্য সরকারকে আরো একবার ধন্যবাদ। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়