শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত : ১৫ জুলাই, ২০২১, ০৪:৩৬ সকাল
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এবারও কোরবানি চামড়ার মূল্য বিপর্যয়ের শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক: গেল কুরবানি ঈদে রাজধানীতে গরুর চামড়া প্রতিটি ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২ থেকে ১০ টাকায়। স্মরণকালের এই বিপর্যয়ের কথা এখনও কেউ ভোলেনি। এরই মধ্যে চলে আসছে আরও একটি ঈদ।

ট্যানারির মালিকরা ইতোমধ্যে সুর তুলছেন তাদের রয়েছে অবিক্রীত চামড়ার স্তূপ। পাশাপাশি চলছে সর্বত্র কঠোর ‘লকডাউন’। এমন পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না হলে ফের চামড়ার বাজারে গতবারের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের।

এদিকে কুরবানির কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয়ক কমিটি, জাতীয় ও বিভাগীয় মনিটরিং টিম গঠন করেছে।

এছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য একটি কন্ট্রোল সেল চালু করেছে। পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে আসন্ন কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করতে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

২০২০ সালে ঈদুল আজহার পর কুরবানির পশুর চামড়ার দাম এতটাই নিম্নগামী হয় যে বিষয়টি অনেকের মাঝেই বিশেষ করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে। উপযুক্ত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে সেগুলো মাটিতে পুঁতে কিংবা রাস্তায় ফেলে দেন।

একই ধরনের শঙ্কার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত চামড়ার মূল্য অনুসরণ করলে সমস্যা হবে না মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। সারা বছর যারা আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করে তাদের জন্য মূল্য বেশি দিতে হয় না। কারণ সেটি তারা জানে। তিনি আরও বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় এদিক সেদিক চামড়া নিয়ে ঘুরে সময় নষ্ট করে। এটি যেন না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ চামড়া পচে গেলে কেউ নিবে না। আর ট্যানারির মালিকরা লবণযুক্ত চামড়া ক্রয় করে, রক্ত মাখা চামড়া নয়। ফলে ভালোভাবে চামড়াতে লবণ মিশিয়ে সংরক্ষণ করলে অবশ্য উপযুক্ত মূল্য দিয়েই আমরা ক্রয় করব। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চলমান লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর ১০ থেকে ১৫ লাখ পশু জবাই কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দেশের প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার অন্যতম আমদানিকারক চীন। সে দেশটিও এখন চামড়া নিচ্ছে কম। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চামড়া পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তার কারণেও দেশটিতে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।

ফলে বাংলাদেশ থেকে চীনে যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা হয় তা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে। এর পেছনে কোভিডও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর একটি ভালো খবর হচ্ছে সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে (২০২০-২১) বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। এ সময় রফতানি আয় হয়েছে ৯৪ কোটি মার্কিন ডলারের।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান জানান, যদি ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত ঋণ দেওয়া না হয় তাহলে গতবারের মতো অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তার দাবি, ঋণ পেলে একটা চামড়াও রাস্তায় ফেলে দিতে হবে না। কোথাও চামড়া পড়ে থাকবে না। প্রান্তিক পর্যায়ে ট্যানারি মালিকরা টাকা দিতে পারবে চামড়া সংগ্রহের জন্য। তিনি আরও বলেন, গত বছর এই বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ টাকার সংকট ছিল ট্যানারির মালিকদের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ : কুরবানির পশুর চামড়ার বাজার পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ এরই মধ্যে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তদারকি করতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে প্রধান সমন্বয়ক করে ১৭ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুত পরিস্থিতি ক্রয়, বিক্রয়সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সার্বিক সমন্বয় ও তদারকি করবে।

পৃথকভাবে ঢাকা, চটগ্রাম ও সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য পৃথক ৭টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম কাঁচা চামড়ার সংরক্ষণ ও ক্রয়-বিক্রয়সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

এছাড়া চামড়ায় মেশানোর জন্য লবণের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় ও বিক্রয় মনিটরিং করবে। এই কমিটি বাণিজ্যি মন্ত্রণালয় গঠিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়সহ সব কমিটির কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এছাড়া ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ৫ দিন পর্যন্ত সার্বক্ষণিক তদারকি করতে চটগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে পৃথক মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় এলাকায় চামড়া ক্রয় ও বিক্রয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিভাগীয় এলাকায় চামড়ার সংরক্ষণ ও মজুত পরিস্থিতি তদারকি করবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্ভূত যে কোনো সমস্যা সমাধান করা এবং প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ করবে। আর লবণযুক্ত চামড়া অবিক্রীত থাকলে এ কমিটি বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয় কমিটি, কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও মনিটরিং কমিটি এবং তদারকি সেলকে সার্বক্ষণিক অবহিত করবে।

কন্ট্রোল সেল : কুরবানির পশুর চামড়া সব ধরনের পর্যবেক্ষণে একটি কন্ট্রোল সেল খোলা হয়েছে। এ সেল থেকে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ, পরিবহণ ও ক্রয়-বিক্রয় বিষয়ে যে কোনো উদ্ভূত সমস্যা জেলা ও উপজেলা সেল থেকে জেনে সমাধান দিবে। এছাড়া জটিল ও নীতিগত বিষয়ে সমাধানের লক্ষ্যে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো মন্ত্রণালয় গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও মনিটরিং কমিটিকে তাৎক্ষণিক সরবরাহ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল সেলের প্রধান সমন্বয়ক অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মালেকা খায়রুন্নেছা বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। কুরবানির চামড়ার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি সেল থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক আছে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তুতি হিসাবে বুধবারও বৈঠক হয়েছে। তবে তদারকি সেলের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়