কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার ২২টি বিভাগে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেন। কবি নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়াও কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ধর্মপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
জানা গেছে, কলেজের কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখায় দেয়ালের উপর দিয়ে বহিরাগতরা প্রবেশ করেন। সেখানে রাতে অবস্থান ও মাদকসেবন করেন। নিউ হোস্টেলের পরিত্যক্ত ভবনে রাতের আধাঁরে যৌনকর্মীদের যাতায়াত রয়েছে। ডিগ্রি শাখার পরীক্ষা ভবনের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক, জিয়া অডিটোরিয়ামের পেছনে, মোতাহের হোসেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের সামনে, কলা ভবনের নিচতলা, বিজ্ঞান ভবন-২ এর বিশেষ কিছু কক্ষে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কলেজ ক্যান্টিন ক্যাফে-৭১ এর চলে মাদকবিক্রি। শহর, শহরতলী ও কোটবাড়ি এলাকার মাদকসেবীদের নিয়মিত আসর ক্যাফে-৭১।
ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদের একজন নারী সদস্য অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বহিরাগতারা বসে সিগারেট খায়। এখানে পাঠাগার ও দু’টি সংগঠনের কার্যক্রম চলে। তাদের কারণে মেয়ে সদস্যরা আসতে চায় না।
কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ হিল ক্বাফি জানান, গত চার বছর ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আধিপত্য বেড়েছে। ফেসবুকে কলেজ ছাত্রীদের সাথে অবৈধ প্রেম সম্পর্কে লিপ্ত হয়, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় বহিরাগত বখাটেরা। তারা ছাত্রীদের ব্ল্যাক মেইল করে কলেজের বিভিন্ন কক্ষে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। এ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র বহন করে তাই এখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মচারী কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলতে চায় না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কলেজের একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, শুভ নামের এক স্থানীয় যুবক মাদক বিক্রির মূল কাজটি করে থাকেন। শুভ ধর্মপুর এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে ও কলেজের গাড়ি চালক শামীম আহম্মেদের ভাই। তারা সবাই আশিক, জুবায়ের গ্রুপের লোক। কলেজ বন্ধ তবে তারা ক্যান্টিনে দিনে ও রাতে অবস্থান করে।
মোটরসাইকেলে মাদক ক্রেতারা আসে, আবার চলে যায়। তাদের সাথে সব সময় অস্ত্র থাকে, তাই নৈশ্যপ্রহরীরা ভয়ে কিছু বলে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, সরকারি কোন নিয়ম না মেনেই ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সদস্যদের কলেজ ক্যান্টিন দেয়া হয়েছে। তারা এখন অপরাধের আখড়া বানিয়েছে ক্যান্টিনকে।
ছাত্রলীগ কুমিল্লা মহানগর সূত্রমতে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১৯ সালের ১১ মে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারা হলেন রাকিবুল ইসলাম জুবায়ের, আশিকুর রহমান জুয়েল ও আবদুর রহমান বাবু। দল থেকে বহিষ্কারের পর এ চক্রের সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী সায়েম বলেন, ‘সে যেই হোক। যারা মাদকের সাথে যুক্ত ছাত্রলীগে তাদের অবস্থান নেই। অভিযোগ পেলে আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করার জন্য আমি অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলবো।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টহল পুলিশ সব সময় কাজ করে থাকে। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে যখন কল পাই, আমরা সাথে সাথে ক্যাম্পাসে যাই। একাধিক বার কিছু যুবককে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের অভিভাবক এসে মুচলেকা দিয়ে তাদের নিয়ে গেছে। কারও নামে মামলা দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘কোতোয়ালি থানার অধীনে এখন চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। নতুন ফাঁড়ির বিষয়ে পুলিশ সুপার স্যার সিদ্ধান্ত দেবেন।’
শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান মনে করেন, কলেজের এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করেন নিয়মিত। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রয়োজন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিকট আমরা লিখিত আবেদন করবো।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে পুলিশে দেয়া হবে। বিগত সময় থেকে এখন বহিরাগতদের প্রবেশ কমেছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আমরা সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। আমাদের পুরা ক্যাম্পাস সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও কলেজের নানা বিষয়ে সমস্যা আছে, ধারাবাহিকভাবে সমাধানের চেষ্টা আছে।’ - ইউ.এন.বি নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :