নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারিকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৭ শতাংশ কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। এছাড়া ৭০ শতাংশ কর্মীর চাকরি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। করোনাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে ৮৩ শতাংশ ছোট উদ্যোক্তা লোকসানে পড়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে পরিচালিত এটুআই, আইএফসি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউএনডিপি, ডব্লিউআরএফ, লংকাবাংলা, লাইট ক্যাস্টল ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রভাবে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেশি বিপদে আছে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। করোনার প্রথম ধাপে আর্থিক সংকট নিরসনে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এ প্রণোদনার টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে কাঙ্ক্ষিত হারে পৌঁছায়নি। যুগান্তর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ হিসাবে প্যাকেজের ৭৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এখনো ৫ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়নি।
জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, এটা সত্যি-করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ এবং ছোট ছোট উদ্যোক্তা। উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো আর্থিক সহায়তাও তারা পাননি। ঘোষিত প্রণোদনার টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ততের কাছে কাঙ্ক্ষিত হারে পৌঁছায়নি। এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঋণখেলাপি, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং প্রভাবশালীরা এগিয়ে রয়েছেন।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএমই ব্যবসায়ীদের বিক্রি ৯৪ শতাংশ কমে গেছে। ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ২১ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং ১৬ শতাংশ বিকল্প উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন। এ খাতের মাত্র ৩ শতাংশের ব্যবসা আগের মতো চালু আছে। ৫৯ শতাংশ কুটির ও ছোট উদ্যোক্তা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন।
জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনার টাকা সঠিকভাবে না পাওয়ার পেছনে দুই ধরনের সমস্যা রয়েছে। প্রথমত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা তৈরি করেছেন। কারণ তারা ব্যাংকে যেতে চান না। আবার তাদের ট্রেড লাইসেন্সও থাকে না। এছাড়া ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাগজপত্র তারা সঠিকভাবে দিতেও পারেন না।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংকারদেরও কিছুটা দোষ আছে। বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি তারা বেশি দুর্বল। এরও আবার কারণ আছে। কম খরচে এক জায়গায় বেশি বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা তুলে আনেন। বিপরীতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগে খরচ বেশি, মুনাফা কম। তবুও মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতিতে ছোটদের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশ। সুতরাং তাদের এগিয়ে নিলে তারাও দেশকে এগিয়ে নেবেন।
১১টি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বলা হয়, বর্তমানে এসএমই খাতের ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বেকার। ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৫৫ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। দ্বিতীয় দফার প্রণোদনা প্যাকেজে এসএমই খাতের বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সদ্যবিদায়ি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। বাকি ২০০ কোটি টাকা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদায়ি অর্থবছরের ১১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১১৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়।
প্রণোদনার বাইরে এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএমই উদ্যোক্তাদের এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ। দুই বছরে ২৪ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :