ডেস্ক রিপোর্ট : বাঁশের ফ্রেমে ঝুলছে অনেকগুলো মাস্ক। আর সেখানে প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘মাস্ক পরুন, সুস্থ থাকুন। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না। সাবান দিয়ে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন। জ্বর সর্দি কাশি গলা ব্যথা নিয়ে ঘর থেকে বাহির হবেন না। মাস্ক ছাড়া রিকশায় ওঠবেন না। প্রচারে সাদেক আলী সরদার।’ বাংলাট্রিবিউন
সাদেক আলী সরদার একজন রিকশাচালক। মানুষকে সচেতন করতে রিকশার মধ্যে তার এই উদ্যোগ। যদিও এই উদ্যোগের জন্য প্রশংসার পাশাপাশি কটু কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১২ জন। দেশে মহামারিকালে একদিনে এত মৃত্যু এই প্রথম দেখলো বাংলাদেশ। শুক্রবার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানিয়েছে এই ভয়াবহ খবর। এমন পরিস্থিতিতে দেশে চলছে লকডাউন, যদিও মানুষজনের মধ্যে নেই সচেতনতা বোধ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পান্থপথে চোখে পড়ে সাদেক আলী সরদারের রিকশাটি। সবার নজরে পড়ছে তার রিকশার সামনের মাস্কগুলো। কেন রিকশার সামনে মাস্ক জানতে চাইলে সাদেক আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে মনে হল, আমি আমার রিকশার সামনে মাস্ক ঝুলাই। আর মানুষজনকে মাস্ক পরতে বলি। ৯-১০ দিন হলো, মানুষকেও বিনামূল্যে মাস্ক দিচ্ছি। আমার রিকশার যাত্রীদেরও মাস্ক দিই।’
প্রতিদিন মাস্ক বিতরণ করতে যেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ করেন সাদেক আলী সরদার। তিনি বলেন, ‘সবাই যদি মাস্ক পরে, সুস্থ থাকে- এটাই আমার আনন্দ। অনেকেই আমার এই কাজের প্রশংসা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলে পাগলা, কেউ বলে ছাগল, ভণ্ড। আমি এগুলো কিছু মনে করি না। আমি আমার মত করেই মানুষজনকে মাস্ক পরতে বলি। আমার এটা করতে ভালোই লাগে।’
সাদেকের নিজের কিংবা পরিবারের কারও করোনা হয়নি, তবুও তিনি সচেতন। সাদেক বলেন, ‘প্রথম একদিন আমার রিকশার সামনে দুই পাশে দুইটা মাস্ক ঝুলিয়েছিলাম। পরে মনে হলো পুরো রিকশাতে আরও মাস্ক ঝুলালে মানুষের চোখে পড়বে। আমি যেহেতু মানুষজনকে বুঝিয়ে বলতে পারি না সেজন্য সামনে একটা প্ল্যাকার্ড লাগিয়েছি। অনেকে মাস্ক কিনতে চায়, আমি বিনামূল্যে দিই।’
১৭-১৮ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন সাদেক আলী। নিজে একাই ঢাকায় থাকেন। পরিবারের সদস্যরা থাকেন নওগাঁ। সাদেক আলী বলেন, ‘আমার তিন ছেলে। এক ছেলে এইচএসসি পাশ করেছে, কিন্তু লকডাউনে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। এক ছেলে ৮ম শ্রেণিতে, আরেক ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সবার খরচ আমাকেই চালাতে হয়। একদিন রিকশা না চালাতে পারলে পরের দিন না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু আর তো কোনও উপায় নেই।’