নিউজ ডেস্ক: দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও শিশুদের দিয়েই চলছিল হাশেম ফুড লিমিটেডের সেজান জুস কারখানাটি। এসব শিশু শ্রমিকদের অল্প বেতনে খাটাতো প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি কয়েক মাসের বেতনও বকেয়া ছিল তাদের। বাংলা ট্রিবিউন
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা।
শুক্রবার (৯ জুলাই) কারখানার প্রধান ফটকে অপেক্ষমাণ শ্রমিকরা জানান, দুজন ঠিকাদারের মাধ্যমে শিশুদের ভোলা ও কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হতো। এই শিশু শ্রমিকদের বেতন ধরা হতো খুবই কম। সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতনে তাদের চাকরি শুরু হতো। ছয় মাস পরে যাদের স্থায়ী (পার্মানেন্ট) করা হতো তাদের দেওয়া হতো ১০ হাজার ৫০০ টাকা। শুরুর দিকে হাতের কাজ করলেও চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিনের সহকারী হিসেবে কাজ করতো এই শিশুরা।
১২ বছর বয়সী শিশুশ্রমিক বিশাখা রানী ক্ষোভের সুরে বলেন, বাবা-মাসহ আমাদের ৫ বোনের সংসার। বেতন-ভাতা ও ওভারটাইম না পাওয়ায় আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। এ কারণে আমরা শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করি। আর এ ক্ষোভেই কারখানার মালিকপক্ষ এই ভবনে আগুন লাগিয়ে আমার মা সপ্না রানীসহ অন্যান্য শ্রমিককে হত্যা করে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। জনকণ্ঠ
কারখানায় কোনো শিশুকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।। বাংলা নিউজ ২৪
বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে কেউ শিশু আছে কিনা তার প্রমাণ দেখাতে হবে। যদি শিশুকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো। এখানে যদি শিশুশ্রম থেকেও থাকে তা সংশ্লিষ্টদের ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, কারখানায় শিশু শ্রমিক কাজ করেছে কিনা এমন কোনো তথ্য আমরা এখনও পায়নি। আমাদের লোকরা কাজ করছেন। আমাদের একটি টিম এখানে কাজ করছে, তারাও এখনও এ বিষয়ে জানাতে পারেনি।
এদিকে সেজান জুস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন দায় নেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আবুল হাসেম সাংবাদিকদের বলেন, এটা নিতান্তই একটি দুর্ঘটনা। তিনি আরও বলেন, এখানে একই সারিতে ছয়টি ভবনে ছয়টি ফ্যাক্টরি আছে। যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেখানে পাঁচ/ছয় শ’ শ্রমিক কাজ করত। জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর গিয়ে আগুন লাগাই নাই। এই দায় আমার না।
সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বলছেন, কোন শ্রমিক সিগারেট খেয়ে ফেলে দিয়েছে। সেখান থেকে আগুন লাগতে পারে। যেহেতু নিচের তলায় কার্টন রাখা ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল, তাই হয়ত আগুনের এই ভয়াবহতা। আবুল হাসেম ঘটনাস্থলে কেন যাননি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার লোকজন সেখানে রয়েছে। যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :