শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৯ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৫ রাত
আপডেট : ০৯ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুব্রত বিশ্বাস: আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও তালেবান উৎখাতের বিশ বছর পর

সুব্রত বিশ্বাস: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বাহিনীকে মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিলো। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত এপ্রিল মাসে বলেন যে, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার ২০তম বার্ষিকীর মধ্যেই এই সেনা প্রত্যাহার শেষ হবে। কিন্তু অন্যদিকে বিদেশি সেনা চলে যাওয়ার পরে কাবুলের সেনাবাহিনীকে রক্ষা করার জন্য এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালানোর জন্য তুরস্ক তার সেনাদের কাবুলে রাখার প্রস্তাব করেছে। তুরস্ক একটি দুর্দান্ত ইসলামিক দেশ। তার সঙ্গে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে দেশে নতুন ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, তুরস্ক তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও সুসম্পর্ক স্থাপনের আশাবাদী।’
আফগানদের মতো স্বাধীনচেতা জাতি বিশ্বে বিরল। ভারত বিজয়ের পর ব্রিটিশরা আফগানিস্তানের দখল নিতে বহু চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলো চূড়ান্তভাবে। তারা সব সময় যুদ্ধ করেছে তাদের চেয়ে বেশি শক্তিসম্পন্ন শক্তির সঙ্গে। এ নিয়ে কখনো আফগানরা বিব্রতবোধ করেনি। আফগানিস্তানে সোভিয়েতের দখলদারিত্বের সময় থেকে গত ফেব্রুয়ারির চুক্তি সম্পাদন পর্যন্ত কতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন। তবে এটা পরিষ্কার যে, মার্কিনিরা যাওয়ার আগেই তালেবানরা আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। দেশের আগামী দিনের একটি জোরালো রাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে বৈধতা অর্জন করেছে। অবশ্য তারা এখনো আফগান সরকারকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, ‘কাবুল প্রশাসন’ বলে সম্বোধন করে। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে আফগানিস্তানে, বিশেষ করে দেশটিতে নারীদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও গণমাধ্যমে। একটি সমঝোতায় পৌঁছার উদ্যোগ ও বিদেশি সৈন্যের প্রত্যাহারের অনুমতি সত্ত্বেও পুরো আফগানিস্তান জুড়ে সহিংসতা অব্যাহত ছিলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।

জাতিসংঘের হিসেবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে এক বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে বেড়েছে নারী ও শিশুর সংখ্যাও। আর এর সিংহভাগ ঘটনার কৃতিত্বই তালেবানদের মতো গোষ্ঠী। গত বছর অনেকগুলো টার্গেট কিলিং হয়েছে যার লক্ষ্য ছিলো সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, বিচার বিভাগ কিংবা বেসামরিক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। আফগানিস্তান পুলিশে নারীর সংখ্যা বেড়েছে, এ সময়ের পুরুষ কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে কিন্তু শতাংশের দিক থেকে নারীর সংখ্যাই বেশি বেড়েছে। নব্বইয়ের দশকে তালেবান শাসনের সময় নারীদের কাজের অনুমতি ছিলোনা এবং স্কুলে যেতে নিরুৎসাহিত করা হতো।

২০০১ সালে সে অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং দেশটির ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস এজেন্সি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির সরকারি অফিসগুলোতে এখনো পুরুষের সংখ্যাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি হলেও গত দু দশকে নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সরকারি অফিসগুলোতে এখন ‘নজিরবিহীন’ সংখ্যায় নারী আছে। সংরক্ষিত আসন আছে পার্লামেন্ট, প্রাদেশিক পরিষদ ও জেলা কাউন্সিলগুলোতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে স্কুলে শিশুর সংখ্যা নয় লাখ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে এসে ৯২ লাখ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশই মেয়ে।

আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ। কিন্তু ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক সহায়তা এসেছে এবং সে কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধির গড় হার ছিলো ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে ২০১১ ও ২০১২ সালে দারিদ্র্যতার হার ৩৮ শতাংশ বেড়ে যায়। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে যা দেশটির স্বাস্থ্য ও সামাজিক সহায়তাকে তুলনামূলক দুর্বল করছে।

প্রবৃদ্ধির গতিও ধীর হয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। কাবুলে মার্কিন উপস্থিতিতে শান্তি আসেনি। মার্কিনিদের বিদায়ে সেটি আসবে সেই গ্যারান্টিও নেই। বরং আরেক অন্ধকার নেমে আসবে সেটাই আশঙ্কা অনেকের। তালেবানরা ইসলামি সরকার চায়, প্রতিপক্ষ বর্তমান আফগান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার চায়। কাবুল সরকার এবং তালেবানরা যদি আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে সমন্বিত একটা সংবিধান রচনা করতে হবে। তারা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে শান্তি কামনা করে তাহলে সমঝোতা হওয়া খুব কঠিন হবে না এবং সেটাই হতে পারে ভবিষ্যৎ আফগানদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ব্যবস্থা। লেখক : ব্যবসায়ী

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়