শিরোনাম
◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২১, ০৫:৩৩ সকাল
আপডেট : ০৮ জুলাই, ২০২১, ০৫:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভার্চুয়াল আদালত কারাগারে বন্দীর চাপ কমাচ্ছে, দুই দফায় ২ লাখ ৯১ হাজার জামিন

নিউজ ডেস্ক: মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জারি করা বিধিনিষেধের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকাজ থমকে থাকলেও বিপুলসংখ্যক জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ভার্চুয়াল আদালত। দুই দফায় ১১৩ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে অধস্তন আদালত নিষ্পত্তি করেছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০০টি জামিন আবেদন। নিষ্পত্তি হওয়া এসব আবেদনের বিপরীতে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ জন আসামি। ফলে বন্দীর চাপ কমেছে কারাগারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতেই দেশের কারাগারে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি বন্দী রয়েছেন। তার ওপর মহামারীর মধ্যেও অপরাধ থেমে নেই। নিয়মিতভাবেই কারাগারে বন্দী আসছেন। তাই করোনার এই সময়ে যদি ভার্চুয়াল আদালতে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির সুযোগ না থাকত, কারাগারগুলোর চিত্র ভয়াবহ হতো। বাংলাদেশ প্রতিদিন

আইনজ্ঞরা বলেন, ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা দেশের বিচার বিভাগের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকলেও নানা জটিলতায় অধস্তন আদালতে সেই সুযোগ নেই। তাই অধস্তন আদালতের ভার্চুয়াল সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় যেসব আইন প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়েছে দ্রুত ওই আইনগুলো যুগোপযোগী করতে হবে বলেও মনে করেন তারা। গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। তখনই সরকার জারি করে বিধিনিষেধ। করোনা সংক্রমণ থেকে বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের রক্ষায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম।

দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’ জারি করে। এ অধ্যাদেশ জারির পরই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধস্তন আদালতে জামিনসংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গত বছর ১১ মে থেকে প্রথম ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। অধস্তন আদালতের পর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চালু করা হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম। বিগত ১০ মাস ধরে আপিল বিভাগের বিচারকাজ চলছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় গত বছরের ১১ মে থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮ কার্যদিবস চলে ভার্চুয়াল আদালত। এ সময়ে সারা দেশে অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে ভার্চুয়াল শুনানিতে মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯টি ফৌজদারি মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেন বিচারকরা। এর মধ্যে জামিন পান ৭২ হাজার ২২৯ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পুনরায় ভার্চুয়াল শুনানি নেওয়া শুরু হয়। চলতি বছর ১২ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৫ কার্যদিবস চলে ভার্চুয়াল অধস্তন আদালত। এ সময়ে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬১টি ফৌজদারি মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তি হয় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এসব আবেদনের জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৭৫ জন বন্দী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে হলেও আদালতের কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারক ও আইনজীবীরা মামলা পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন। এতে শারীরিক দূরত্বও বজায় থাকছে আবার বিচার প্রার্থীরাও জামিন আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারগুলোতে এখনো যত বন্দী রয়েছে, তা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি। দেশের ৬৮ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৪৫০ জন। সেখানে গতকাল পর্যন্ত বন্দী রয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার। গত বছরের ২০ মে পর্যন্ত সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৯ হাজার। অর্থাৎ করোনার এই সময়ে কারাগারে নতুন বন্দী এলেও মোট বন্দীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ  বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও জামিন আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা। এতে একদিকে বিচার প্রার্থীদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, অন্যদিকে কারাগারেও বন্দীদের চাপ কমছে। তিনি বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে সবসময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দী অবস্থান করে। করোনাকালেও অপরাধ কিন্তু থেমে নেই। প্রতিদিনই বিভিন্ন অপরাধের মামলায় বহু ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন। এতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন শুনানির সুযোগ না থাকলে কারাগারের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিত বলেই মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বলেন, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও জামিন আবেদন শুনানির করার ব্যবস্থা রাখা আসলেই প্রশংসাযোগ্য। তবে শুধু জামিন শুনানি নয়, মহামারী বা যে কোনো দুর্যোগকালীন বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যেন করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, এ কারণে ভার্চুয়াল আদালতের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে অধস্তন আদালতে দ্রুতগতির ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় বাধা হয়ে আছে, এমন পুরনো আইনগুলোও দ্রুত সংস্কার করে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়