রাশিদ রিয়াজ : আফগানিস্তান ছেড়ে মার্কিন সেনাদের পাশাপাশি জার্মান, ব্রিটিশ সেনারা চলে গেছে। ৭ হাজার ন্যাটো সেনা চলে যাচ্ছে আফগানিস্তান। দুই দশকের বেশি সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধ, অভিযান শেষে এখন দেশটি ছেড়ে তালেবানের ভয়ে পালাচ্ছে আফগান সেনা ও পুলিশ। ৪২১টি জেলার ১৭৬টি জেলা তালেবানদের দখলে চলে গেছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভের প্রধান কেন ম্যাকক্যালাম ইঙ্গিত দিয়েছেন আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ আসন্ন। মার্কিন জেনারেল অস্টিন স্কট মিলারও তাই মনে করেন। অথচ আমেরিকানরা তিন-পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল। তালেবানকে উৎখাত করতে, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনর্গঠন করতে, জঙ্গিবাদবিরোধী শাস্ত্রীয় মতবাদে স্থানান্তরিত করতে। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও তার কোনও লক্ষ্যই টের পাওয়া যায়নি। শতশত আফগান সেনারা পালিয়ে তাজিকিস্তানে চলে গেছে।
যদিও আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক অ্যারিয়ান বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরিয়ে নেয়ার অর্থ তালেবানের হাতে বিভিন্ন জেলার পতন নয়। এটি কৌশলগত পশ্চাদপসরণ। স্থানীয় গোত্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বিনা রক্তপাতে একের পর এক জেলা দখল করছে তালেবানরা। সরকারি বাহিনী হয় নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে অথবা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করছে। তালেবান মুখপাত্র সোহেল শাহিন বলেছেন, রাজধানী কাবুল দখল করার কোনো অভিপ্রায় তালেবানের নেই কিন্তু কোনো বিদেশি সেনা এমনকি কোনো সামরিক ঠিকাদারও এই নগরীতে থাকতে পারবে না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শঙ্কা করছে ৬ মাসের মধ্যে আফগান সরকারের পতন ঘটবে। কার্যত মার্কিনীরা তালেবানদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি আলোচনার টেবিলে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি।
এসব আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আফগান সরকারের পক্ষে আসেনি। মার্কিনীরা নিজেদের জানমাল নিয়ে আফগান ছেড়ে পালাতে পারলে বাঁচে এই নীতির ফলেই দেশটিতে গ্রহণযোগ্য কোনো মীমাংসায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত দুই দশক আগে যেমন অনিশ্চিত ছিল এখনো তা আরো কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছে। অথচ এর দায়ভার বিশে^র কোনো দেশ, সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন নিতে চাচ্ছে না। কুড়ি বছরে মার্কিনীরা আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ন্যাটো জোটের সাড়ে তিন হাজার সেনাকে আফগানিস্তানে প্রাণ দিতে হয়েছে। সকল পক্ষেই নিজেদের জয়লাভের দাবি করছে কিন্তু লাখ লাখ বেসামরিক আফগান নারী, পুরুষ এমন শিশুর নিহত হওয়ার জন্যে কে দায়ী তা কেউ বলছে না।
আপনার মতামত লিখুন :