মিরাজুল ইসলাম: বাইবেল-কোরআন অনুযায়ী মানবসভ্যতার প্রথম হত্যাকাণ্ডটি ঘটে হাবিল-কাবিলের মধ্যে। এরপর থেকে স্বজাতি হত্যা সংঘটিত হতেই থাকলো। ধর্ম বা আইন কোনো কিছুই একে থামাতে পারেনি। আধুনিক প্রত্নবিজ্ঞানীরা প্রাগৌতিহাসিক আমলে সংঘটিত মানবহত্যা বিষয়ে নতুন তথ্য উদঘাটন করেছেন। ছবিতে যে মাথার খুলির ভেঙে যাওয়া অংশ দেখা যাচ্ছে সেটি প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগের ঘটনা। ইউরোপের দক্ষিণ ট্রান্সসালভানিয়ার এক গুহায় পাওয়া যায় এই পলিওলিথিক আমলের আদি মানুষের মাথার খুলিটি। জার্মানির এবারহাল্ড ভার্সিটির ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, কোনো প্রাকৃতিক কারণে নয়, মানুষটিকে হত্যা করা হয়েছিলো মাথায় পাথর ছুঁড়ে ও বেসবল ব্যাটের মতো শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে। শুধু তাই নয়, ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকারী বাম হাত দিয়ে আঘাত করেছিলেন মৃত ব্যক্তিটিকে। আঘাতের ধরনে আরো প্রতীয়মান হয়, প্রায় সাথে সাথেই মৃত্যবরণ করেছিলেন আক্রান্ত মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিটি। আঘাতপ্রাপ্ত এই ভাঙা খুলিটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয় Cioclovina calvaria, যা প্রাচীন মানব সভ্যতায় সংঘটিত প্রথম অপরাধের চিহ্ন হিসেবে এখন শনাক্ত করা হচ্ছে।
সাধারণত আমাদের আদিতম পুরুষ নিওন্ডারথ্যালদের পর উচ্চতর ও মধ্যম পলিওলিথিক গোত্রের আবির্ভাব হয়। বলা হয়ে থাকে, সেই সময় থেকেই গুহায় ছবি আঁকা, মূর্তি বানানো, লোক-ধর্ম বিশ্বাস, শিকার, কৃষি ইত্যাদি মানবিক আচারের বিকাশ ঘটে। কী কারণে এই প্রাগৈতিহাসিক হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিলো তা হলফ করে বলা না গেলেও সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থা বিচার করলে সম্যক ধারণা করা যেতে পারে। সম্ভবত শিকারের ভাগাভাগি কিংবা পছন্দের নারীকে এককভাবে ভোগ করার কামনা কিংবা সদ্যজাত অলৌকিক কোনো ধর্ম বিশ্বাস মেনে নেওয়া নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে এই মাথা ফাটাফাটি। অন্য কিছুও হতে পারে! এখন মনে হচ্ছে বেচারা হয়তো তার সমাজে দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবী হবার চেষ্টা করছিলো! লেখক ও চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :