জিএম মিজান, মারুফ হাসান: [২] দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এই চিকিৎসকদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বেশ কয়েকটি আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব বদলির আদেশ দিয়েছে। সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সেই তালিকায় দেখা যায় কিছু মৃত ডাক্তারদের নাম।
[৩] বগুড়া: বগুড়ায় করোনা মোকাবেলায় প্রায় ৭ মাস পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সাবেক) সহকারী অধ্যাপক ডা. জীবেশ কুমার। কিন্তু মৃত এই চিকিৎসককে ৭ মাস পর পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডা. জীবেশ কুমারকে বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়। ডা. জীবেশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ২২তম বিসিএস ক্যাডারের (স্বাস্থ্য) কর্মকর্তা ছিলেন।
প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাস সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করতে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৪৩ জন চিকিৎসককে বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেলা হাসপাতালে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনের ১৫ নাম্বার ক্রমিকে ডা. জীবেশ কুমার প্রমাণিকের নাম রয়েছে।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন আমরা হাতে পেয়েছি। সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণকারী একজন চিকিৎসকের নাম রয়েছে। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
[৪] রংপুর: রংপুর মেডিকেল কলেজের ৬৫ জন চিকিৎসককে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। তার মধ্যে মৃত ডা. ফেরদৌস আরা শেখ এর নাম তিন নাম্বারেও রয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আরা শেখ নামের একজন মৃত চিকিৎসককে প্রজ্ঞাপন জারি করে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম নুরুন্নবী লাইজু সাংবাদিকদের জানান, ওই চিকিৎসক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্যবিভাগকেও জানিয়েছি তবে এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে।
[৫] কুষ্টিয়া: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এসএম নুর উদ্দিন আবু আল বাকী ২০২০ সালের ১৬ জলাই দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান। তিনি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
কিন্তু অতিমারি কোভিড-১৯ সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মৃত ডাক্তার নূরদ্দিনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল থেকে নতুন কর্মস্থল মেহেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে মৃত ওই চিকিৎসককে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ পত্র পেয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের মধ্যে হাস্য-রস সৃষ্টি হয়।
[৬] সিরাজগঞ্জ: একইসঙ্গে গত বছরের ১০ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল বারী শামীমকে নাটোর জেলা হাসপাতালে এবং রংপুর মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের ডা. ফেরদৌস আরা শেখ নামে আরও এক চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। তিনিও মৃত বলে জানা গেছে।
[৭] এছাড়াও চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া রংপুর মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মমতাজ বেগম ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. গিয়াসউদ্দিনকেও বদলি করা হয়েছে আদেশে।
[৮] মেহেরপুর: ডা. এসএম নুরুদ্দীন আবু আল বাকী রুমি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের কৃতি সন্তান। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর প্রায় এক বছর পরে ৫ জুন তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড ইউনিটের দায়িত্ব পালনের জন্য পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
আপনার মতামত লিখুন :