শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪২ সকাল
আপডেট : ০৬ জুলাই, ২০২১, ০৪:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আর্থিক সংকট ও কার্যক্রম চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা, ব্যয় কমাতে ভবন ছাড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বণিক বার্তা: আয় কমে যাওয়ায় গত বছর থেকেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ পরিচালন ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। এক্ষেত্রে বাড়তি চাপে রয়েছে ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই ভবন ভাড়া বাবদ বকেয়া অর্থের পরিমাণ প্রতি মাসেই বাড়ছে। এমনকি খরচ কমাতে ভাড়া ভবন ছাড়তে হচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করোনার আগে যে হারে শিক্ষার্থী ভর্তি হতেন, এখন তার সিকি ভাগও নেই। পুরনো শিক্ষার্থীরাও নিয়মিতভাবে টিউশন ফি পরিশোধ করছেন না। এসব কারণে গত এক বছরে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আয়ে ধস নেমেছে। তাই ব্যয় কমাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই ভাড়া করা ভবন ছেড়ে দিচ্ছে তারা।

এমনই একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বনানী এলাকায় দুটি ভবনের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। করোনায় সৃষ্ট আর্থিক সংকটে সম্প্রতি এর মধ্যে একটি ভবন ছাড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। অন্যটিরও বেশ কয়েক মাস ধরে ভাড়া বকেয়া রয়েছে।

সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে আয় কমে যাওয়ায় ব্যয়সংকোচন নীতিতে চলতে হচ্ছে। অন্য অনেক খাত প্রণোদনা পেলেও করোনায় সৃষ্ট তীব্র আর্থিক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। ঋণের জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি। ভাড়া পরিশোধ না করায় ভবন মালিক নোটিস করেছেন। তাই ভবন ছেড়ে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা এলে আমরা পুনরায় ভবন ভাড়া নেব।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির এ চেয়ারম্যান আরো বলেন, শুধু ফারইস্ট নয়; বড় কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া টিউশন ফি। এক বছর ধরে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন না বললেই চলে। আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও অনেক ধরনের সমস্যায় রয়েছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে শিক্ষার্থীদের ফির জন্য চাপ দিতে পারছে না, অন্যদিকে বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে চাপ আছে। সব মিলিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ।

একইভাবে পরিচালন ব্যয় কমাতে ভাড়া নেয়া ভবন ছেড়েছে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানীর গ্রীন রোডে দুটি ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয়সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি দুটি ভবনই ছেড়ে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি।

ভবন ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, করোনায় সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে খুব কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আমরা অনেক কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারলেও অনেকেই সেটি পারছে না। একদিকে ব্যয় কমানোর চাপ, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা। তাই করোনার এ পরিস্থিতিতে আমরা গ্রীন রোডের দুটি ভবনই ছেড়ে দিয়েছি। একই কারণে আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অবকাঠামোর আকার কমিয়ে এনেছে।

একইভাবে ব্যয় কমিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের জন্য ভাড়া নেয়া বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে ভবন না ছাড়লেও ভাড়া পরিশোধ নিয়ে চাপে রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বনানীর প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও। রাজধানীর বনানীর তিনটি ভবনে কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর মধ্যে স্টার টাওয়ারে সাত মাসের, টেক্সটাইল ভবনে পাঁচ মাসের ও এইচবিআর টাওয়ারে এক মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে।

ভবনের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে আর্থিক সংকটে রয়েছে ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। বরিশালের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনটি ভাড়া করা ভবন রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা দিতে আরো দুটি ভাড়া ভবন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। ছয়-সাত মাস ধরে এর কোনোটিরই ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. ইমরান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের ফি থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ন্যূনতম খরচও মিটছে না। আমরা মনে করেছিলাম, এইচএসসিতে অটো পাস দেয়ার কারণে অনেক বেশি শিক্ষার্থী পাব। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে ভর্তি হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে প্রতি মাসেই বড় আকারের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নেয়া ভবনগুলোর মালিকদের ভাড়া কমানোর জন্য অনুরোধ করেছি। তাদের বলেছি, ভাড়া না কমালে ভবনগুলো ছেড়ে দেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়