বিনোদেন ডেস্ক: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল পুস্তক ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার বিরুদ্ধে। তবে চিত্রকর্ম আত্মসাতের অভিযোগে যে মামলা হয়েছে, সেখানে বিশ্বজিৎ সাহাকে আসামি করা হয়নি। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে, রুমা চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আজিম পলাশকে।
গত মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ২৯ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পরদিন এক লিখিত ব্যাখ্যায় বিশ্বজিৎ সাহা নিজেও দাবি করেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্ম চুরি হওয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ সূত্র: দেশ রুপান্তর অনলাইন
ঘটনার পটভূমি ব্যাখ্যা করে বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘২০১৩ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ তার অন্য পুত্র-কন্যাদের উপস্থিতিতে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় গিয়ে হুমায়ূনের আঁকা ২৪টি চিত্রকর্মের মধ্যে ২০টি হস্তান্তর করি। বাকি চারটি ছবির মধ্যে একটি চিত্রকর্ম হুমায়ূন আহমেদ জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে উপহার দেন। আরেকটি বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে উপহার দেওয়া হয়। নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন কনসাল জেনারেল সাব্বির আহমেদকে একটি ছবি উপহার দেন হুমায়ূন আহমেদ। একটি ছবি মেলা থেকেই হারিয়ে যায়। এ ব্যাপারে জ্যামাইকার পুলিশ প্রিসিংকটে একটি জিডিও করা হয়েছিল, তার একটি কপি হুমায়ূন আহমেদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করি। হুমায়ূন আহমেদের আঁকা সব ছবি ও প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত “হুমায়ূন আহমেদের শেষদিনগুলি” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।’
শাওনের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন রুমা চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আজিম পলাশ। শাওনের মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় থাকার সময় অবসরে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সে সময় রুমা চৌধুরী ও তার প্রাক্তন স্বামী বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। এরই সূত্রে ২০১২ সালের জুন মাসে হুমায়ূন আহমেদ তার আঁকা ২৪টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে তাদের দেন। শর্ত ছিল, প্রদর্শনী শেষে চিত্রকর্মগুলো তারা ফেরত দেবেন। কিন্তু চিত্রকর্মগুলো তিনি ফেরত পাননি। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন শাওন। পরে অনেকবার ছবিগুলো ফেরত চেয়েও পাননি তিনি। অনেক দেনদরবারের পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুমা তার প্রাক্তন স্বামী বিশ্বজিৎকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় ২৪টি ছবির মধ্যে ২০টি ফেরত দেন। বাকি চারটি ছবি ফেরত দেননি।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘এত দিন তারা বলে আসছিলেন, ছবিগুলো চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু না দেওয়া চারটি ছবির একটি মঞ্জুরুল আজিম পলাশের আয়োজন করা প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে দেখলাম! বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।’
এদিকে মঞ্জুরুল আজিম পলাশ ও রুমা চৌধুরী পৃথক পৃথক বিবৃতিতে অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছেন, তাদের প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত চিত্রকর্মটি হুমায়ূনের আঁকা মূল চিত্রকর্ম নয়, সেটা ছিল চিত্রকর্মটির কপি।