শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৫ জুলাই, ২০২১, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ০৫ জুলাই, ২০২১, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শর্মী ভৌমিক: বর্ষাকে দেখেছিলেম আমি

শর্মী ভৌমিক: মেঘলা মধুর দিনে আমি বসি একেলা ভাবিছি কতো কথা মনে। ফেলে আসা দিন কেবলি আমায় পিছু টানে! কৈশোরে এমন দিনে ঘরে বসে থাকতে মন চাইতো না কিছুতেই আমার। গ্রীষ্ম শেষে যখন বর্ষার আগমন ঘটার লগ্ন আসতো, তখন কোথা থেকে যেন জলস্রোত ধেয়ে আসতো আমাদের ক্ষেত-পাথারগুলোকে ডুবিয়ে দিতে। গ্রীষ্মে কাঠফাটা রোদ্দুরে চৌচির হওয়া জমিজমা, মাঠঘাট, প্রান্তর নিমিষেই শান্তিজলে স্নান করে মুক্তি লাভ করতো, খরতাপের হিংস্র দহন হতে। বর্ষা শুরু মানে মেঘলা আকাশ। যখন তখন অঝোরধারায় বৃষ্টির আগমন। রাতদিন বিরতিহীন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। সূর্যের মুখ দেখা ভার হয়ে যায়। বৃষ্টি বাতাসে প্রকৃতিতে বান ডেকে যায় পূর্ণতার বিশুদ্ধ জোয়ার। শো শো করে জলস্রোত এগোতে থাকে। জলে ভরে যেতে থাকে মাঠঘাট ও গ্রামের চারিদিক। ফসলী মাঠগুলো এসময় যৌবনবতী হয়ে ওঠে। নদীর বাড়ন্ত জল ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ সময় ঝড়ের গতিতে নানান এলাকায় ঢুকে পড়ে নদীর জলরাশি। জলস্রোতের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে হাজার রকমের মাছ। বর্ষার স্বচ্ছ জলে মাছেদের খেলা দেখে অভিভূত হয় গ্রামের মানুষ। আকাশে মেঘেরা ডেকে উঠলেই মাছেরা মাতাল হয় আনন্দ উন্মাদনায়। তখন গ্রামের বৃদ্ধ, যুবা, শিশু-কিশোরেরা জাল, পলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরবার জন্য। নব্যজলে হৈহুল্লোড়ে মাছ ধরার কী যে আনন্দ, তা যারা গ্রামে বড় হয়নি তারা বুঝবে কেমন করে! একবার কৈশোরে আমার দাদার সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম আমি ও আমার ছোটভাই।

দাদা টইয়াজালে ধরছিলো চকচকে রূপালি সরপুটি ও টেংরা মাছ। জাল ফেলে একটু অপেক্ষা করে আবার রশি ধরে টেনে তুলতেই জালের থলিতে লাফাতে থাকে কতোকগুলো তরতাজা মাছ। মাছগুলো ডুলায় তুলে আবারো জাল ফেলে দিতো দাদা জালে মাছ আসার আশায়। আমরা ডুলার মাছের দিকে তাকিয়ে ভীষণ আনন্দ-তৃপ্তি পেতাম। আবার, অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জল হাতড়ে ধরছিলো হরেক রকম মাছ। আমিও চেষ্টা করছিলাম তাদের মতো। হঠাৎ আমার পায়ে বড় একটি মাছের লেজের ধাক্কায় আমি শিউরে উঠলাম। ধপাস করে বসে পড়লাম জলের ভেতরে মাছটিকে ধরবার জন্য। ধরেও ফেলেছিলাম প্রায়। কিন্তু, শক্তির অভাবে বিশাল বোয়াল মাছটিকে আমার ছোট্ট দুহাতের মুঠোয় আটকাতে পারিনি সেদিন! বোয়াল মাছটি লেজ ঝাপটে আমার হাত থেকে ছুটে চলে গেলো। মাছটিকে হারানোর দুঃখ নিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছিলাম আমি। কিন্তু সেই অনুভূতিটি হৃদয়ে আজো অমলিন। ছবির মতো চোখের কোণে ভেসে উঠে সেই সবকিছু। বোয়াল মাছটিকে ধরেও ধরতে না পারার আফসোস আমি বোধহয় জীবনেও ছাড়তে পারবো না কোনদিন! ঝর ঝর বৃষ্টি, সাথে শীতল হাওয়া, থামার কোন লক্ষণ থাকতো না। গ্রামের মধ্যকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে পড়তো তখন। কোথাও এমন কাঁদা হতো যেখানে হাটু পর্যন্ত ডেবে যেতো। জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়তো। ছাতা মাথায় কাদামাটির ভেতরেও মানুষ বের হতো কর্মের তাড়নায়। ঘরের বৌ-ঝিয়েরা বৃষ্টিতে ভিজে পরিবারের সকলের জন্য রান্না করতো। তখন মানুষের রান্নাঘরটি থাকার ঘর থেকে খানিকটা দূরেই থাকতো। লাকড়ির চুলায় ধোঁয়া ফুকতে ফুকতে কতো কষ্ট করেইনা রেঁধে খাওয়াতো মা-ঠাকুমারা! এখন গ্যাসের চুলার সুবাধে সেসব বানোয়াট গল্প বৈ কিছু নয়। ছোটবেলায় বর্ষায় বৃষ্টির দিনে সকাল দুপুর বুঝা যেতো না। আকাশ সারাক্ষণই আঁধারে ঢেকে থাকতো। কখনো মুষলধারে কখনওবা রিমঝিম ছন্দে ঝরতো বৃষ্টিধারা। সারাদিন পড়াশোনা করতে ভাল লাগতো না আমার। দিদির সাথে লুডু খেলতে খেলতে কখনো কখনো একঘেয়ে মনে হতো। বৃষ্টি কমলে আমার সমবয়সীরা আসতো আমাদের ঘরে। কাঁঠাল বীচি ও সীমের বীচি দিয়ে খেলেছি হরেক রকম খেলা। ধাপ্পাখেলায় আমাকে হারানোর তেমন কেউ ছিলোনা আমার বন্ধুমহলে। সাপলুডু খেলায় একটু আধটু চুরি চামারি না করলে যেনো খেলাটাই জমতো না, হা হা হা! ভীষণ নস্টালজিক হয়ে পড়ছি লিখতে লিখতে!

সবুজ গাছপালায় ঘেরা সুন্দর একটি গ্রাম। সেই গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের সেই বর্ষার সৌন্দর্য কি লিখে বুঝানো যায়? টিনের চালায় রাতদিন রিমঝিম বৃষ্টি ঝরার ছন্দ, মোহাচ্ছন্ন হৃদয়। জানালার গ্রিল ধরে বৃষ্টির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা। পেয়ারা গাছটির পাতা বেয়ে বৃষ্টির জল গড়িয়ে গাছটির গা ভিজছিলো সেদিন। একটি ছোট্ট টুনটুনি পাতার আড়ালে তার নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছিলো বারবার। পাশের জামগাছটিতে থোকা থোকা জাম ঝুলে আছে চমৎকার। বৃষ্টির আবেশে জামগুলো পেকে রসালো ও কুচকুচে কালো হয়েছে বেশ । টুনটুনি পাখিটার জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছিলো আমার। তাকে ধরে এনে বুকে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে করছিলো খুব। মনটা কেমন যেন করছিলো পাখিটার জন্য। আমাদের গ্রামের চতুর্পাশ্বে জল থাকে পুরো বর্ষাকাল জুড়ে। আমার শৈশবে রাস্তাঘাটের তেমন ভালো অবস্থা ছিলো না বলে, সে সময় নৌকাই ছিলো মানুষ চলাচলের একমাত্র উত্তম-মাধ্যম। গ্রামটিকে বর্ষাকালে ছোট্ট একটি দ্বীপের মতো মনে হতো। আমরা সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে থাকতাম, নৌকার মাঝি ঘাটে এলে নৌকায় করে স্কুলে যেতাম আমরা। নৌকায় করে স্কুলে যাওয়ার হাজার স্মৃতি এখনও আমাকে নাড়া দেয় চোখ মুদলেই।

আমার চোখে বর্ষাকাল মানে ঝর ঝর মুখর বাদল দিন। কদম গাছে ফুটে থাকা হাজারও কদম ফুল,রঙিন রাধাচূঁড়ার অপূর্ব স্নিগ্ধতা। বিলে, ঝিলে শাপলা শালুকের মিষ্টি মধুর হাসি। বর্ষা মানে মাঝি-মল্লার ভাটিয়ালি গান গেয়ে নৌকা বেয়ে চলা, ছাতা মাথায় জীর্ণ পথিকের হেঁটে চলে যাওয়া। বর্ষায় বৃষ্টিতে মায়ের হাতের খিচুড়ি ও ইলিশ ভাজা খাওয়, কুড়মুড়ে মুড়ি-চানাচুরে গল্প-আড্ডায় হারিয়ে যাওয়া। মেঘ-বৃষ্টি মানে আষাঢ়-শ্রাবণ। তাইতো মন যেনো কিছুই মানে না। বৃষ্টি বরষায় আবেগে উতলা হয় হৃদয়। টুপটাপ, রিমঝিম ছন্দে আরামের ঘুম মানেইতো প্রিয় বর্ষা আমার কাছে।          ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়