ইসমাইল হোসেন : [২] বিশাল দেহে সাদা-কালো ছোপ ছোপ দাগ। ওজন হয়েছে প্রায় ৩৫ মণ। কাছে গিয়ে পাগলু বলে ডাকতেই লাফালাফি শুরু করল গরুটি। বড় আদরের শখের গরুটি ঘিরে ভেড়ামারার টিপু-পাপিয়া দম্পতির গল্পের শেষ নেই। পরিবারের বাকি চার সন্তানের মতোই লালন পালন করছেন পাগলু নামের এই গরুটি।
[৩] ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ১৬ দাগ পূর্ব পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ টিপুর বাড়িতে জন্ম হয় পাগলুর। একই সময়ে টিপুর স্ত্রী ও এক সন্তান জন্ম দেন। ছোট গরুটিকেও পরিবারের সদস্যদের মতো লালন-পালন শুরু করেন তিনি।ছোটবেলা থেকেই লাফালাফি করে। এজন্য নাম রাখে পাগলু। পাগলু নাম ধরে ডাকলেই নাচের ভঙ্গিমা করে। বেশ সুন্দর মসৃণ শরীর ফিজিয়ান জাতের গরু পাগলু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে।
[৪] মোহাম্মদ টিপুর ভাষ্যমতে পাগলুর তিনবেলা খাবার তালিকায় ঘাসের পাশাপাশি কলা আপেল আঙ্গুর মালটা আখের গুড় শরবত ওরস্যালাইন ও ভুসি। দুইবেলা গোসল করানো। সময় মতো খাবার দেওয়া মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে মশারী টাঙ্গানো, গরমের সময় শরীর সুস্থ রাখতে বাতাসের ব্যবস্থা করা এবং রাতের বেলায় পালাক্রমে জেগে থেকে পাহারা দেন পরিবারের সদস্যরা।
[৫] তিন বছরে তার ওজন হয়েছে প্রায় ৩৫ মন গরুটি দেখতে প্রতিদিন টিপুর বাড়িতে মানুষ ভিড় করছে। তবে লকডাউনে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বিক্রি করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। টিপুর স্ত্রী পাপিয়া খাতুন বলেন,প্রতিদিন সকালে পাগলুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। একবার টিপু পাগলু কে মেরেছিল এজন্য দুই তিন দিন কোন খাবার খাননি। পাগলুর খাবার নিয়ে তার সামনে গেলে শুরু হয়ে যায় তার নাচন। পাগলু খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার মায়ায় ভরা মায়াবী চোখ দেখলে মায়ায় ভরে ওঠে।
[৬] পাপিয়া খাতুন বলেন, পাগলুর জন্মের সময় আমার ছেলে আব্দুল্লাহ,র জন্ম হয়। তখন থেকেই আমি সন্তানের মতো তাকে বড় করছি পাগলু তার মায়ের দুধ খাওয়ার পর কিছু দুধ অবশিষ্ট থাকত, সেটুকু ছেলেকে খাওয়াতাম। ছেলে আবদুল্লাহ যখন হাঁটতে শেখে তখন তার হাতের খাবারটা নিয়ে পাগলুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে পাগলু খেত। কোন বিরক্ত করত না। এত আদরের পাগলুর বিক্রি হওয়ার সময় কি করবেন? এমন প্রশ্নে বলেন পাগলু বিক্রির উপযোগী হয়েছে, কিন্তু যেদিন বিক্রি হয়ে যাবে সেদিন মনের অবস্থা কি হবে, বলতে পারছিনা।
[৭] পাগলু কে স্কেলে ওজন করা হয়েছে। তার ওজন প্রায় ৩৫ মন। টিপু আশা করেছেন ১৫ লাখ টাকা দাম পেলেই বিক্রি করে দেবেন। তবে টিপু হতাশ হয়ে বলেন, এবার হাট বসবে না। লকডাউন চলছে। তাই খুবই চিন্তায় আছি। কী ভাবে বিক্রি করবো। প্রতিদিন অনেকে মোবাইলে খোঁজ নেই। কিন্তু দাম ঠিকমতো বলে না।