শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০২১, ০৫:২১ সকাল
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২১, ০৫:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লকডাউন: ব্যাপক ক্ষতির মুখে পরিবহন খাত, প্রতিক্রিয়া ব্যবসায়ীদের

যুগান্তর: করোনাভাইরাস সংক্রমণে পরিবহণ খাত বিশেষ করে বাস ও লঞ্চ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাবি, দীর্ঘমেয়াদে বাস বা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখলে আয় বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক ধরনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

গত বছরের লকডাউনে প্রচুর মাশুল দিতে হয়েছে। এবারও ক্ষতির মুখে রয়েছেন তারা। তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে কঠোর লকডাউনের যেমন প্রয়োজনীয়তা আছে, তেমনি মানুষের জীবিকারও দরকার আছে। তারা বলেন, এ পর্যন্ত গণপরিবহণের ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও মালিকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।

এছাড়া শিল্প ও ব্যবসা সংক্রান্ত সংগঠনের নেতারা বলেছেন, যে কয়েকটি খাতকে বিধিনিষেধের বাইরে রাখা হয়েছে সেসব খাতে কর্মরত নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে মুভমেন্ট পাশ দিতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একজন শ্রমিক কয় টাকা আয় করেন যে, দীর্ঘমেয়াদে কাজ না করে চলতে পারবেন। তবে বাস্তবতাও স্বীকার করতে হবে। করোনা মহামারির কারণে সৌদি আরবসহ অনেক দেশে এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। তবে সেটি পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, এখনো দেশের অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না, অনেকে মাস্কও পরছে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। লকডাউনে শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য শাজাহান খান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কার্ডধারী শ্রমিকদের কম দামে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্য দিতে তিনি অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত ধাপে ধাপে গাড়ি বন্ধ রাখায় বাস মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার লকডাউনে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে মালিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতেও পারছেন না।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে কঠোর লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা আছে। এটা জাতীয় বিষয়। তেমনি জীবন ধারণের জন্য জীবিকারও প্রয়োজন আছে। দীর্ঘদিন ঘরে বন্দি করে রাখা হলে মানুষ এক সময়ে জীবিকার তাগিদে বাইরে বেরিয়ে আসবে। তাই জীবিকার বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে গাড়ির অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে। নিয়মিত গাড়ি চালু করে না রাখলে ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাবে। টায়ার নষ্ট হয়ে যাবে। এর আগে ৬৭ দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার সময়ে অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো পরিবর্তন করতে হয়েছে। এবারও দীর্ঘমেয়াদে লকডাউন হলে একই ধরনের ক্ষতি হবে। কিন্তু মালিকরা সরকার থেকে কোনো প্রণোদনা পায়নি। আমরা বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু সুফল পাইনি।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাতি শহিদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া ধাপে ধাপে বিধি-নিষেধের কারণে লঞ্চ মালিকরা এ পর্যন্ত দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নতুন লকডাউনে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, লঞ্চ চলাচল না করলেও সরকারকে ওই টাকা দিতে হবে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখলে ইঞ্জিন ও বডির অনেক ক্ষতি হয়। বন্ধের সময়ে লঞ্চের ইঞ্চিন চালু রাখতে হয়। এতে তেল পোড়ে। কিন্তু আয় হয় না। শ্রমিকরাও বাড়তি আয় থেকে বঞ্চিত হন। তিনি আরও আগাম টাকা না দিলে সার্ভে সনদ দেওয়া হয় না।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ২০২০ সালেও লকডাউনে লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়। তখনো শ্রমিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বছর তাদের সরকার আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু গত রোজার ঈদ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার শ্রমিকও এ সহযোগিতা পেয়েছেন বলে আমরা জানি না। অথচ এ খাতে ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন হলে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। লঞ্চ চলাচল না করায় তাদের খোরাকি বা নাশতার টাকাও দেওয়া হয় না। এভাবে কতদিন শ্রমিকরা বাঁচতে পারবেন। তিনি শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানান।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, অধিকাংশ মানুষকে টিকা না দেওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনতে লকডাউনের বিকল্প নেই। কিন্তু বিধিনিষেধ আরোপের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তাতে অনেক সংশোধনী আনা প্রয়োজন।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক ও শিল্প কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষজন চলাফেরা করতে না পারলে ব্যাংক বা শিল্প খোলা রেখে লাভ কী? এ জন্য মুভমেন্ট পাশ চালু করা উচিত। যে কয়েকটি খাতকে বিধি-নিষেধের বাইরে রাখা হয়েছে, সেসব খাতে কর্মরত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে মুভমেন্ট পাশ দিতে হবে।

যাতে তারা এসব সেবা নিতে পারে। এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের পরিবহণকেও বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে রাখা উচিত।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় করোনায় ক্ষুদ্র দোকান মালিক-কর্মচারী ও পরিবহণ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ দুই শ্রেণির মানুষের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা উচিত। প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব না হলে সরকারের মানুষকে সহায়তা করার জন্য খাদ্যসামগ্রীর তালিকায় অন্তত তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যদি তাদের সহায়তা দেওয়া না যায় এবং গত বছরের মতো বিধি-নিষেধ দীর্ঘায়িত হয় তাহলে চরম বেকায়দায় পড়বে।

আজ থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধি-নিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হলে দেশের ক্ষুদ্র দোকান মালিকরা নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।

হেলাল উদ্দিন বলেন, গত বছরের মার্চ থেকে কয়েক দফায় সরকার মানুষের চলাফেরায় বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এ সময় শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু মাঝপথে শুধু দোকানপাট বন্ধ থেকে শিল্পকারখানা চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। এতে রাজধানীসহ সারা দেশের দোকান মালিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত তিনটি ঈদ ও দুটি পহেলা বৈশাখে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পেরে অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। যারা ব্যবসা করছে তারা জমানো পুঁজি ভেঙে খাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একমাত্র শপিংমল, দোকান ও শো-রুমগুলোতে কঠোরভাবে বিধি-নিষেধ মানা হয়। মাস্ক ছাড়া কোনো মার্কেটেই মানুষজন প্রবেশ করতে দেওয়া না। গত বছর বিধিনিষেধের পর দোকানপাট খুলে দেওয়া হলে সারা দেশে মাত্র ছয়জন মালিক-কর্মচারীর আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এরপরও কেন বারবার দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সংক্রমণ রোধের দায়িত্ব কি শুধু দোকান মালিকদেরই।

আক্ষেপ প্রকাশ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, দোকান মালিকরা ছোট ব্যবসায়ী। তারা গার্মেন্ট মালিকদের মতো সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। তাই তাদের বিষয়ে কেউ চিন্তাও করে না। এবারের বিধি-নিষেধ দীর্ঘায়িত হলে ৪০-৫০ হাজার দোকান মালিক পথে বসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়