শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২১, ০৩:০২ রাত
আপডেট : ২৯ জুন, ২০২১, ০৩:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আশঙ্কাজনক হারে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক: করোনায় মৃত ১০৪ জনের মধ্যে ৩৫ জন খুলনা বিভাগে। রাজশাহী বিভাগে সাত আর রংপুর বিভাগে নয়জন মারা গেছেন। সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। লকডাউন দিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না সীমান্তবর্তী জেলার সংক্রমণ ও মৃত্যু হারে। এদিকে করোনা সংক্রমণে এপ্রিলের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যেখানে সংক্রমণ হার বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে। সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ হার যদি এভাবেই গুনতে থাকি তাহলে অচিরেই যেসব বেড খালি আছে তা আর থাকবে না। আইসিইউ বেডও পূর্ণ হতে বেশি সময় লাগবে না। এজন্য আমাদের যেসব স্থান দিয়ে বিদেশ থেকে মানুষ আসছে সেখানে হাউস ট্রেনিং করা জরুরি। তাহলে অনেক বেশি উপকার পেতে পারি।’ গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগে ২৭, চট্টগ্রামে ১৯, রাজশাহীতে সাত, খুলনায় ৩৫, বরিশালে দুই, রংপুরে নয় ও ময়মনসিংহে পাঁচজন মারা গেছেন।

তবে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক সামছুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় খুলনা বিভাগে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় নয়, খুলনায় ছয়, মেহেরপুরে চার, ঝিনাইদহে চার, চুয়াডাঙ্গায় দুই, বাগেরহাটে দুই, যশোরে এক, সাতক্ষীরায় এক ও নড়াইলে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় এ বিভাগে মারা গেলেন মোট ১ হাজার ১১ জন। ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ১০ জেলায় রেকর্ড ১ হাজার ৪৬৪ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলাভিত্তিক শনাক্ত ও মৃতের হারে খুলনা জেলা এগিয়ে। খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, ২৪ ঘণ্টায় মহানগরী ও জেলায় ৭৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে; যা মোট নমুনা পরীক্ষার ৪০ শতাংশ।

রাজশাহীতে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী শাহেদ জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। গেল কয়েক দিনে প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙে। হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের ঢল নামায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা। আক্রান্তদের অক্সিজেন লাগায় সরবরাহ নিয়েও উদ্বেগে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, এভাবে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের চাপ বাড়ছে। এখন আইসিইউ আর খালি নেই। কোনো আক্রান্তের এখনই আইসিইউ প্রয়োজন হলে দেওয়া সম্ভব হবে না। অক্সিজেন সংকট নিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের এখানে ভর্তি আক্রান্তদেরই ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। স্পেকট্রা মানিকগঞ্জ থেকে অক্সিজেন এনে সরবরাহ করা হয়। তারাও এখন ঠিকমতো দিতে পারছেন না। স্পেকট্রার পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও রাজশাহী ও নাটোরে অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে আছেন মীর আখতারুল। তিনি বলেন, হঠাৎ আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা আক্রান্তরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। সেখানে প্রতিদিন প্রায় দেড় শ জনকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সাতজন পজিটিভ ছিলেন। অন্য সাতজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ সাতজনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারজন ও তিনজন রাজশাহীর বাসিন্দা। উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীর আরও চারজন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর একজন করে মারা গেছেন। চলতি মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এ নিয়ে মোট ৩১৮ জনের মৃত্যু হলো।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সৈয়দ নোমান জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দুজন করোনায় আক্রান্ত ও ছয়জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২২ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

দিনাজপুর প্রতিনিধি মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৬৫। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। মৃত চারজনের তিনজনই সদরের। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়েও আরও তিনজন মারা গেছেন। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাগেরহাট প্রতিনিধি শেখ আহসানুল করিম জানান, এ জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২৪ জন। শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। করোনায় মারা গেছেন দুজন। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির জানান, লকডাউন চললেও করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো. রফিকুল আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে চাঁপাইবাবগঞ্জে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৩৮ জন মারা গেলেন। জেলায় ৪৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট গড় শনাক্তের হার ৯.৭৪ শতাংশ।

চট্টগ্রামে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক রেজা মুজাম্মেল জানান, চট্টগ্রাম করোনাভাইরাস আক্রান্তে গত দেড় বছরের রেকর্ড ভাঙল। রবিবার এক দিনেই আক্রান্ত হন ৩২৬ জন এবং মারা যান সাতজন। অতীতে উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু কম থাকলেও এখন এ দুটি লাফিয়েই বাড়ছে। ফলে বাড়ছে শঙ্কা, আতঙ্ক।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, ২৬ জুন আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০, ২৫ জুন ২১৬, ২৪ জুন ২৪৭, ২৩ জুন ২৩৬ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘শনিবার এক দিনেই ৩২৬ জন আক্রান্ত হন। এটি চট্টগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ রেকর্ড। বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে।’

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে একজন এবং জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতজন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের শতকরা হার ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নাটোর প্রতিনিধি নাসিম উদ্দীন নাসিম জানান, নাটোরে লকডাউনেও কমছে না সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গে তিনজন মারা গেছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৫ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার ৩৬ দশমিক ৬৭। জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ হাজার ৪৬৯ জন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়