স্পোর্টস ডেস্ক : [২] প্রথমবার ফাইনালে উঠেই পাকিস্তান সুপার লিগের শিরোপা জিতেছে মুলতান সুলতানস। ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে পেশোয়ারক জালমিকে ৪৭ রানে হারিয়েছে রিজওয়ানের দল। মুলতানকে শিরোপা জেতানোর পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন তরুণ পেসান শাহনেওয়াজ ধানি। দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরা তরুণ ক্রিকেটার ও সেরা বোলারের পুরস্কার।

[৩] কয়েকদিন আগেই ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের ভবিষ্যত তারকা হবেন শাহনেওয়াজ ধানি। তাকে উপাধি দিয়েছিলেন, প্রিন্স অব সিন্ধ নামে। সে পথেই এগুচ্ছেন ধানি। অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন পাকিস্তানের উইন্ডিজ সফরের দলেও। অথচ এই ধানিই কি না একটা সময় ট্রায়াল দেয়ার জন্য অন্যের জুতো ধার করে এসেছিলেন।

[৪] শাহনেওয়াজ এমন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছেলে যেখানে টেলিভিশনের দেখা মেলে না সচরাচর। ইন্টারনেট, স্মার্টফোনও ব্যবহার খুব একটা হয় না। পিএসএল, আইপিএলের খবরই রাখে না সেই গ্রামের বাসিন্দারা।

[৫] পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) শাহনেওয়াজের অংশ নেওয়ার পর থেকেই তার গ্রামের মানুষ এই টুর্নামেন্টের নাম জানতে পারে।

[৬] এর চাইতেও অবাক করা যে বিষয় ক্রিকেটপ্রেমীদের আপ্লুত করবে তাহলো, ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাট-বল কিছুই ছিল না শাহনেওয়াজ ধানির। এমনটি জুতাও ছিল না তার। বন্ধুর কাছ থেকে জুতা ধার করে অনূর্ধ্ব-১৯ এর ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন ধানি। আর সেই জুতাই বদলে দেয় ধানির ভাগ্য।

[৭] প্রোপাকিস্তানিসহ পাকিস্তানের বেশ কিছু গণমাধ্যমে উঠে এসেছে শাহনেওয়াজ ধানির দারিদ্রপীড়িত জীবন ও সেখান থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার গল্প।

[৮] জানা যায়, পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের লারকানার খুহাওর খান ধাহানি নামের এক ছোট্ট গ্রামে অনেক সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন ধানি। গ্রামে টেপ-বলে খেলেই ক্রিকেট শিখেছেন। দারিদ্রপীড়িত পরিবার ধানির এই ক্রিকেটাসক্ত পছন্দ করত না। ধানির বাবা চাইতেন ছেলে পড়াশুনায় বেশি মনোযোগ দিক। আর সংসারে সহযোগিতা করুক।

[৯] পড়াশুনার ফাঁকে ধানি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন। গম ও ধান চাষে সহায়তা করতেন বাবাকে। এরই মধ্যে পড়ালেখা ও ক্রিকেটকে চালিয়ে যেতেন। ধানির বাবা চাইতেন ছেলে পড়ালেখা করে সরকারি চাকরি পাবে। সংসারের অনটন ঘুঁচাবে।

[১০] ধানি ঠিকই পড়াশুনা করেছেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অর্জন করেন বি-কম ডিগ্রি। এরইমধ্যে তার বাবা মারা যায়।

[১১] একদিন ক্রিকেটর প্রতি ছোটভাইয়ের প্রবল ঝোঁক দেখে ধানির বড়ভাই তাকে উৎসাহ দেন। ভাইয়ের উৎসাহে ধানি বন্ধুর কাছ থেকে জুতা ধার করে অনূর্ধ্ব-১৯ এর ট্রায়ালে অংশ গ্রহণ করেন। ট্রায়ালে তিনি নির্বাচিত হন এবং আন্ত:জেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে সুযোগ পেয়ে যান। এবারের পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) মুলতান সুলতান্স তাকে দলে নেয়। সেখানেও আলো ছড়িয়েছেন।

[১২] পেশওয়ার জালমির বিপক্ষে অবিস্মরণীয় অভিষেক ঘটে তার। অভিষেকেই তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচে ফেরে মুলতান সুলতান্স। নেন গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট। সেই থেকে শুরু আর পেছনে ফেরে তাকাতে হয়নি। টুর্নামেন্টে ১১ ম্যাচে ২০ উইকেট শিকার করে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর খেতাবটা নিজের রে নেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। সেই সাথে জিতে নেন সেরা ইমার্জিং ক্রিকেটারেরও পুরস্কার। - ক্রিকবাজ