শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ২২ জুন, ২০২১, ০৫:৩৮ বিকাল
আপডেট : ২২ জুন, ২০২১, ০৫:৩৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] চিকন হতে জিমে গিয়ে প্রথম বাঙালি নারীর বডি-বিল্ডার ইউরোপা ভৌমিক

স্পোর্টস ডেস্ক: [২]পেশি সঞ্চালনার জগতে বাঙালির পরিচিতি নতুন নয়। তবে নারীদের এই ধারায় আসা অনেক পরে। যতীন্দ্রচন্দ্র গুহ, মনোহর আইচ বা গুণময় বাগচির নাম সবার মুখেমুখে। তবে সেই তালিকায় একজন নারীর নাম এসে পড়লে সত্যিই অবাক হবেন যে কেউ। বাঙালি নারীদের চেহারার সঙ্গে কেন জানি এই ব্যাপারটি সহজে মেনে নেয়া যায় না। কারন শাড়িতে বাঙালি নারীকে দেখেই অভ্যস্ত আমরা।

[৩]তবে সেই অভ্যস্ত চোখকেই আক্রমণ করেন ইউরোপা ভৌমিক। তিনি চান, মানুষ তার চেহারা দেখে বিব্রত হোক। মাত্র ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির শরীরটা নিয়েই মানুষকে অবাক করে দিতে চান তিনি। আর ইতিমধ্যেই সেটা করেও ফেলেছেন।

[৪]১৯৯৯ সালে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় জন্ম ইউরোপার। বাবা বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। তার জন্মের সময় বাবা ছিলেন সান্টা ইউরোপা নামের একটি জাহাজে। মেয়ের নাম তাই রাখলেন ইউরোপা। একজন বাঙালির এমন নাম শুনলেও অবাক লাগে। আরও অবাক লাগে সেই মানুষটির বেড়ে ওঠার গল্পে।

[৫]ছোটো থেকেই বন্ধুবান্ধবরা হাসিঠাট্টা করত চেহারা নিয়ে। বেঁটে, মোটা চেহারার ইউরোপা। এমনকি পরিবারের লোকরাও বারবার বলত রোগা হতে। এভাবেই একদিন রোগা হওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেলেন জিমে। না, ওয়েট লিফটিং-এ হাত দেননি তখন। তাতে তো পেশি আরও মজবুত হবে। ইউরোপা তখন সাধারণ বাঙালি মেয়ের মতোই ছিপছিপে হতে চেয়েছিলেন। আর তাই হালকা ধরনের ব্যায়াম করতেন। খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন। দুমাসের মধ্যে কমিয়েছিলেন ১০ কেজি ওজন।

[৬]তার নিজের মনে হয়, তখন যেন অ্যানুরেক্সিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সবসময় তাড়া করত মোটা হওয়ার ভয়। কিন্তু না, সেই ভয় বেশিদিন টিকল না। খুব তাড়াতাড়ি ভালোবেসে ফেললেন জিমকে। এরপরের গল্পটা রূপকথার। একটা ইতিহাস গড়ে ওঠতে লাগলো সবার অজান্তেই। বডি বিল্ডিং-এর জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটল একজন বাঙালি নারীর ইতিহাসে এই প্রথম। যে মেয়েটা রোগা হতে জিমে গিয়েছিল, সেই ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলল পেশিসঞ্চালনাকে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সমস্ত সংকোচ সরিয়ে রেখে হাত দিল ওয়েট লিফটিং-এ। একটু একটু করে শক্ত হতে থাকল শরীরের সমস্ত পেশি।

[৭]সঙ্গে চলল বিশেষ ডায়েট। ওজন হঠাৎ করে বেড়ে গেলেও মুশকিল। আর শরীর গড়ে তোলার কাজে পুরুষ এবং নারীর হরমোনের পার্থক্যের কারণে কিছুটা আলাদা নিয়মও মেনে চলতে হয়। তবে কলকাতায় তো কোনো নারী বডি বিল্ডার নেই। তাই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই কারোরই। পুরোটাই চলল পরীক্ষার মতো। দেখতে দেখতে অবশ্য সাফল্য মিলল তাতেই। আর একটু একটু করে নিজের চেহারার বদল দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন ইউরোপা নিজেই।

[৮]২০১৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইউরোপা নাম দিলেন সতীশ সুগার ক্লাসিকসে। মেয়ে পেশি-সঞ্চালনায় নাম দেবে? প্রথমে যেন ঠিক মেনে নিতে পারেননি অভিভাবকরা। তবে মেয়ের ইচ্ছায় বাধা দেননি। প্রথমবার অবশ্য পুরস্কার এল না ঘরে। পরের বছর সেই একই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হলেন তিনি। এবার পরিবারের আপত্তি ভেঙে গেল। বরং তার মা সুপর্ণাই উৎসাহ দিতে শুরু করলেন আরও বেশি করে।

[৯]২০১৭ সালে এশিয়া বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালে ন্যাশানাল বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হলেন তিনি। একে একে মিস ফিজিক অলিম্পিয়া, মিস রাইজিং ফিনিক্স সহ সমস্ত আন্তর্জাতিক খেতাবই জয় করতে চান তিনি। তবে এদেশে তার উপযুক্ত পরিকাঠামোই বা কোথায়? তাই তিনি পাড়ি দিয়েছেন মাদ্রিদ শহরে।

[১০]নিজের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে আবারো এদেশে ফিরে আসতে চান তিনি। তিনি চান বাঙালি মেয়েরা নিজেদের শরীর নিয়ে লজ্জা ভুলে তাকে শক্তিশালী করে তুলতে শিখুক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়