রাশিদ রিয়াজ : শিবসেনার লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছিলেন বাল থ্যাকারে, ৮০ শতাংশ সমাজ সেবা ও ২০ শতাংশ রাজনীতি করতে হবে। শিবসেনার গত ৬ বছরের অডিট রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা। ভারতের নির্বাচন কমিশনে দেওয়া ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে শিবসেনার অধিকাংশ খরচ হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে। দি প্রিন্ট
১৯৬৬ সালের ১৯ জুন বাল থ্যাকারে শিবসেনা প্রতিষ্ঠা করেন। দলটির স্লোগান ঠিক করা হয়, ‘৮০ টাক্কে সমাজকরণ, ২০ টাক্কে রাজকরণ’। ৫৫ বছর গত হয়েছে শনিবার। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে এখনো একই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু দলটির গত ৬ বছরের খরচের হিসেব বলছে ভিন্ন গল্প। দি প্রিন্ট বিশ্লেষক বলছেন নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে দলের ব্যয়ের বেশিরভাগ অংশই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছিল। সামাজিক ব্যয়ের চেয়ে শিবসেনা রাজনীতিতে ব্যয় করেছে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। তবে গত ৬ বছরে যে বছর নির্বাচন ছিল না সে বছর রাজনীতির চেয়ে সামাজিক কাজে বেশি ব্যয় করেছে শিবসেনা। তবে তা বাল থ্যাকারের নির্ধারিত করে দেওয়া ৮০ নয়, তা ছিল ৩২ শতাংশ। শিবসেনাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উদ্ধব থ্যাকারে যিনি ভারতের মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ভারতের রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম ধনী ব্যক্তি। শিবসেনা নেতারা বলছেন তারা সামাজিক কাজের নিরিখে দলের শাখাগুলোত খরচের চেয়ে তৃণমূল পর্যায়ে অধিক মানুষেল কল্যাণে ব্যয় করেন। সিনিয়র শিবসেনা এমপি বিণায়ক রাউত বলেন দলের কেন্দ্রীয় দল শুধু একটি দিক। বরং দলের শাখা পর্যায়ে সামাজিক কাজে অধিক ব্যয়ের বাধ্যকতা রয়েছে। কোভিডে বিশাল ভূমিকা পালন করা হয়েছে। শুধু মুম্বাইতে ৫৬ হাজার ৫শ বোতল রক্ত সরবরাহ করেছে। রাজনীতি পরিবর্তন হতে পারে তবে শিবসেনার ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ সমাজকর্ম ও ২০ ভাগ রাজনীতির বিষয়টি এখনো অনসরণ করা হচ্ছে।
তবে অডিট বলছে ২০১৯-২০ সালে ভারতে দুটি প্রধান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিবসেনা ব্যয় করেছে ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ রুপি। লোক সভা ও রাজ্যসভার নির্বাচনে এ টাকা ব্যয় করে শিবসেনা। যা বছরে শিবসেনার মোট ব্যয়ের ৭৯ শতাংশ এবং ওই বছর শিবসেনা নির্বাচনে মোট ব্যয় করে ৯৮ কোটি ৩৭ লাখ রুপি। শিবসেনার এ নির্বাচনী ব্যয় ছিল গত ৬ বছরে সর্বোচ্চ। ২০১৮-১৯ সালে অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে শিবসেনা খরচ করে ৯ কোটি ৩৯ লাখ রুপি। আর একই বছর দলটির মোট ব্যয় ছিল ১৪ কোটি ৫৬ লাখ রুপি। একই ভাবে ২০১৬-১৭ সালে মহারাষ্ট্রের প্রধান ১০টি শহরে শিবসেনার নির্বাচনী ব্যয় দাঁড়ায় ১৪ কোটি ২৮ লাখ যা মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ, এবছর শিবসেনার মোট খরচ ছিল ১৮ কোটি ৮৯ লাখ রুপি। ২০১৪-১৫ সালে লোকসভা ও রাজ্যসভা নির্বাচনে শিবসেনা ব্যয় করে ২৪ কোটি ৯২ লাখ রুপি যা মোট ব্যয়ের ৮৮ শতাংশ। মোট ব্যয় ছিল ২৮ কোটি ১০ লাখ রুপি। ২০১৭-১৮ সালে নির্বাচন না থাকায় এ খাতে খরচ তেমন করেনি শিবসেনা। ২০১৫-১৬ সালে দলটি নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় করে ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি এবং মোট ব্যয় করে ৬ কোটি ১৯ লাখ রুপি। ২০১৮-১৮ সালে শিবসেনার নির্বাচনী ব্যয় দাঁড়ায় ২ কোটি ২৭ লাখ রুপি যা মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ। মোট ব্যয় ছিল ৭ কোটি ৪২ লাখ রুপি।
এদিকে গত ৬ বছরের মধ্যে ৩ বছরে ত্রাণে শিবসেনার খরচ ১ শতাংশের কম ছিল। ২০১৫-১৬ ও ২০১৭-১৮ সালে ত্রাণে শিবসেনা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি খরচ করেছে। ২০১৫-১৬ সালে শিবসেনা ২ কোটি রুপি ‘মদত’ অর্থাৎ সহায়তা দেয়। যা ওই বছরে শিবসেনার মোট খরচের ৩২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে শিবসেনা মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি তহবিলে ২ কোটি রুপি দান করে। যা ছিল ওই বছর শিবসেনার মোট খরচের ২৭ শতাংশ। শিবসেনার ব্যালান্স সিটে দেখা যায় গত ৬ বছরে দলটি দাও ও সহায়তা হিসেবে ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ রুপি ব্যয় করেছে। গত ৬ বছরে শিবসেনা বিভিন্ন উৎসবে ৩ কোটি ৯ লাখ রুপি ও অফিসে সভার খরচ হিসেবে ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৬২ লাখ রুপি। মহারাষ্ট্রের বিজেপি’র মুখ্যমুখপাত্র কেশব উপাধ্যায় বলেন দলীয় নীতি অনুসারে শিবসেনা খরচ করছে না। দলটি সামাজিক কর্মের চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির পকেটে খরচ করছে বেশি। এধরনের মন্তব্যের বিরোধিতা করে শিবসেনা নেতা রাউত বলেন পুলিশ, রেশন বা অন্যান্য যে কোনো শাখা পর্যায়ে সমাজকর্মে খরচ বেশি করে তার দল। পয়ঃনিষ্কাশন, রক্ত দান, টিকাদান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে শিবসেনা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেমন্ত দেশাই বলেন, বালথ্যাকারে যখন শিবসেনা প্রতিষ্ঠা করেন তার পর দুই দশকে খুব কম নির্বাচনেই দলটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ফলে অনেক বেশি সমাজকর্ম করতে পেরেছে দলছি। এমনকি বিনিয়োগ ভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে শিবসেনা।
আপনার মতামত লিখুন :