রাজু চৌধুরী : [২] চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার মির্জারপুল এলাকার বাসিন্দা এক দম্পতিকে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
[৩] সোমবার (২১ জুন) নির্যাতনের শিকার হওয়া হামিদা আক্তারের ছোট বোন নাজমুন আক্তার জানান, তাদের বাড়ি চন্দনাইশের মোহাম্মদপুর কাজী বাড়ি এবং সেখানেই ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ জুন।
[৪] হামিদা আক্তার (৪২) ও আবদুল হাকিম (৬০) নামে ওই দম্পতির ওপর চাচাতো ভাই ও তার স্ত্রীসহ ৪ জন মিলে এ নির্যাতন চালায় । ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত ১১ জুন আমার আপন চাচী অসুস্থ হলে আমরা সবাই সেখানে যাই। তাকে দেখে আমরা সেই দিনই চলে আসি। পরের দিন অর্থাৎ ১২ জুন আমার চাচী মারা যায়। সেই দিন আমার বোন হামিদা আর তার স্বামী সেখানে যায়। পরে তারা দাফন শেষ করে চলে আসে। আমার চাচাত ভাই বৌ এর স্বর্ণ হারিয়ে যায় তখন সন্দেহ করা হয় আমার মেঝো বোন হামিদাকে।
[৫] সোমবার (১৪ জুন) আমার চাচাতো ভাইকে এম ইলিয়াস মিয়া ফিরোজ এবং তার বৌ রীপা খান আমার বোনের মির্জাপুলের বাসায় আসে। তারা এসময় বলে বাড়িতে অনেক কাজ তোমাদের যেতে হবে। তখন তারা দুই জনকে আমাদের গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ১৬ জুন আমার চাচাত ভাই ইলিয়াজ মিয়া ফিরোজ, ভাবী রীপা খান, দূরসম্পর্কের ভাইপো মিজানুর রহমান, চাচতো ভাই গোলাম আজাদ এ চারজন মিলে শুরু করেন নির্যাতন।
[৬] প্রথমে তাদেরকে ইলেকট্রিকের পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। এসময় তাদেরকে নাকি দুটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। তারপর আমার বোনকে সিগেরেটের মতো কি জেনো খাইয়ে দেওয়া হয়। তখন আমার বোন বমি করেতে শুরু করে। সে সময় আমার বোনকে মারতে মারতে বলা হয় স্বর্ণগুলো কোথায় রেখেছিস। তখন সে মার থেকে বাঁচার জন্য তাদের বলে আমি স্বর্ণ মির্জাপুলের বাসায় রেখেছি। তখন তারা সেখান থেকে আবার মির্জাপুলের বাসায় এসে আলমারি ভেঙ্গে সেখানেও কিছু খুঁজে পায় না।
[৭] নাজমুন আক্তার বলেন, পরে আমাকেও সন্দহ করা হয়। আমি তাদেরকে আমার বাসায়ও এসে খুঁজে দেখতে বললাম।
[৮] এসময় তিনি ক্ষোভ ও অভিযোগ করে বলেন, পরে আমার এক ভাই চন্দনাইশ থানায় মামলা করতে গেলে চন্দনাইশ থানার ওসি মামলা গ্রহণ না করে চলে যান। নির্যাতিতা হামিদা আক্তার বলেন, আমাকে তারা অনেক মারছে। মারতে মারতে তারা আমাকে গোলাপি রঙের কি যেনো ওষধ খাইয়ে দেয়। তারপর আমাকে সিগারেটের মতো কি একটা খাওয়ালো। এটা খাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই। এসময় তিনি তার ওপর হওয়া অমানুষিক অত্যাচারের সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
[৯] আহত হামিদা আক্তারের ছোট বোন ফারজানা আক্তার বলেন, একজন মানুষকে চোরের অপবাদ দিয়ে এভাবে কিভাবে মারতে পারে। আমার আপু বার বার বলছে তিনি চুরি করেনি। তারপরও তাকে এভাবে মারা হয়েছে। আমাদের পরিবার এর বিচার চাই।
[১০] এব্যাপারে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নির্যাতনের অভিযুক্ত কে এম ইলিয়াজ মিয়া ফিরোজকে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
[১১] ২ নং জোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দম্পতিকে নির্যাতনের বিষয়টি খুবই অমানবিক। চুরির অপবাদ দিয়ে কেউ এভাবে মারতে পারে না। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :