শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০২১, ০৩:৩৭ রাত
আপডেট : ২১ জুন, ২০২১, ০৩:৩৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ঘষামাজা

সমকাল: মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের ঘষামাজা। দায়িত্বশীল নেতারা জানাচ্ছেন, যে কোনো সময় নতুন এ কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।

নেতারা বলছেন, নতুন কমিটিতে থাকবে অনেক চমক। কমিটিতে আসছেন নতুন অনেকেই। আসছেন সাংগঠনিকভাবে সুপরিচিত ও ইমেজধারী নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাদেরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে এ কমিটি গঠনে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, সারাদেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। সাংগঠনিকভাবে ঢাকা মহানগর দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যথাসময়ে আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আন্দোলন-সংগ্রামের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপি। নেতৃত্ব পরিবর্তন করেও আসেনি গতিশীলতা। গত সিটি নির্বাচনে সংগঠনের দুর্বল অবস্থা আরও স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচনের দিন মহানগর নেতাদের কোথাও পাওয়া যায়নি। নির্বাচনী কেন্দ্রেও তারা বলতে গেলে অনুপস্থিতই ছিলেন। নেতাকর্মীদেরও সেভাবে মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভেঙে অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৭০ সদস্যের কমিটিতে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল সভাপতি এবং সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশার সাধারণ সম্পাদক হন। ৬৬ সদস্যের ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিতে সভাপতি হন সাবেক কাউন্সিলর এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আহসান উল্লাহ হাসান। তবে উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম মামলা জটিলতার কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণার সময়েই সেটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্র থেকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আহসান উল্লাহ হাসান মারা যাওয়ায় নিয়মবহির্ভূতভাবে সংগঠনের সহসভাপতি এ এফ এম আব্দুল আলীম নকীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ নিয়েও দলের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়।

ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে বিতর্ক মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের তোড়জোড়ের মধ্যে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভা হয়। এতে মহানগরের দায়িত্বশীল নেতারা নিজেদের সফল দাবি করে দলের সিনিয়র নেতাদের, এমনকি স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়েও অসাংগঠনিক বক্তৃতা দেন। এতে কেউ কেউ এমন বিতর্কিত বক্তৃতাও দেন যে, নতুন কমিটিকে 'প্রতিহত' করা হবে। সংগঠনের নেতাদের এমন বক্তব্য ও আচরণে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড।

নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির ঘোষিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের পদায়ন করায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করে। এগুলোকে ব্যক্তিবিশেষের 'পকেট কমিটি' অভিহিত করে ঢাকা মহানগর উত্তরের অনেক সিনিয়র নেতাই এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। এমন প্রেক্ষাপটে ত্রিধারায় বিভক্ত উত্তরের কমিটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কমিটি বিতর্কিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীরা রাগে-ক্ষোভে অনেকটাই নিষ্ফ্ক্রিয়। অনেকে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। মহানগরের কোন্দলের এ রাজনীতি পুরো বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনেও ছড়িয়ে পড়ছে।

উত্তরে আলোচিত যারা: ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটিতে যাদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সংগঠনের বর্তমান সভাপতি এম এ কাইয়ুম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সী বজলুল বাছিত আঞ্জু, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি, সহসভাপতি শামীমুর রহমান শামীম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম আবদুল আলীম নকী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আয়োরারুজ্জামান আনোয়ার, এজিএম শামসুল হক, সোহেল রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ। এদের মধ্যে আহ্বায়ক পদে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী অনেকটা চূড়ান্ত বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। সদস্য সচিব পদে সাইফুল আলম নীরব ও আমিনুল হকের মধ্য থেকে যে কোনো একজন আসতে পারেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

উত্তরের নেতাকর্মীদের ভাবনা :ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাদের একাংশ মনে করছে, সংগঠন পরিচালনার জন্য যেসব বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেগুলোর সমাধানে এম এ কাইয়ুমের বিকল্প নেই। তিনি দেশের বাইরে থাকলেও নিয়মিত সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছেন, উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাদের মতে, দেশের বাইরে রয়েছেন এ অজুহাতে তাকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া না হলেও তার পছন্দের কাউকে কমিটির আহ্বায়ক করা হলে সংগঠনকে সচল রাখতে এম এ কাইয়ুম ভূমিকা রাখতে পারবেন।

একটি অংশ মনে করছে, মহানগর উত্তর কমিটির ত্যাগী ও যোগ্য কাউকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। কে কোন সিন্ডিকেটের- তা গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির আদলে তরুণ ও যোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

আরেকটি অংশ মনে করছে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলের হাইকমান্ড যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন। এই অংশের একজন উদাহরণ টেনে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বাড়ি চাঁদপুর। তার পরও যোগ্য মনে করে তাকে ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তা পালন করেছিলেন। একইভাবে বিএনপিতেও যোগ্য কোনো নেতাকে দায়িত্ব দিলে এবং দল উপকৃত হলে, তারা সে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন।

কোন্দল নেই; কিন্তু নিষ্ফ্ক্রিয়তা দক্ষিণে : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে উত্তরের মতো প্রকাশ্য কোনো কোন্দল নেই। কিন্তু নেতারা সক্রিয় না হওয়ায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ৭০ সদস্যের এই কমিটির হাতেগোনা মাত্র কয়েকজনকে দেখা যায় বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে। সংগঠনের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে নিয়ে হতাশ নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কোনো বিষয়েই তিনি ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি।

দক্ষিণে আলোচনায় যারা :ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নতুন কমিটিতে যাদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সংগঠনের বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বাণিজ্য সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবীব, যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটির প্রাথমিক খসড়ায় আমান উল্লাহ আমান ও রফিকুল আলম মজনুর নাম রয়েছে। তবে কমিটিতে আমান উল্লাহ আমানের বিরোধিতা করছে বিএনপির একটি শক্তিশালী অংশ।

এদিকে এ কমিটিতে ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক নেতৃত্বের বাইরে থেকে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠেকানোর প্রচেষ্টা চলছে। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতারা এ বিষয়ে একাট্টা। তারা চাচ্ছেন, মহানগর থেকেই নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা হোক। এ জন্য তারা দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। এই নেতারা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে চাচ্ছেন হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে। সদস্য সচিব হিসেবে অনেকে হাবিবুর রশিদ হাবীবকে, আবার অনেকে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে চাচ্ছেন। তরুণ উদীয়মান ও সাংগঠনিক নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে ইশরাক হোসেন নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এ হিসেবে দক্ষিণে সোহেল-ইশরাক কমিটিও গঠন হতে পারে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়