ইত্তেফাক: রংপুরের লাল মাটিতে উত্পাদিত সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম আজ রবিবার থেকে বাজারে আসার কথা থাকলেও হাঁড়িভাঙা পরিপক্ব হওয়ায় চাষিরা বাধ্য হয়ে কয়েক দিন আগে থেকেই বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারে তুলতে শুরু করেছেন। এ মৌসুমে হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে এখন দাম কম থাকায় ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একদিকে গাছে পাকছে আম, অন্যদিকে দরপতনের ভয়। ফলে চাষিরা পড়েছেন উভয় সংকটে।
স্থানীয় বাজারে শ্রেণিভেদে হাঁড়িভাঙা আম ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রচুর আম আসলেও ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। করোনার কারণে পর্যাপ্ত ক্রেতা না আসায় আমের দরপতনের শঙ্কায় আছেন চাষিরা। রংপুরের আম উত্পাদনকারী এলাকাগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় পরিবহনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কম বলে জানা গেছে।
নগরীর সিটি বাজার ও পদাগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে হাঁড়িভাঙা আম সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। আমের সাইজ দেখে ক্রেতারা দরদাম ঠিক করছেন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আম বিক্রি করতে পারছেন না। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর উদ্দেশে আম বাজারের সঙ্গেই অস্থায়ীভাবে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তাদের শাখা খুলেছে। অনেককে আম কিনে বাজারের পাশে অবস্থিত কুরিয়ারগুলোর মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠাতে দেখা গেছে। কেজি প্রতি ১২-১৫ টাকা করে সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে কুরিয়ার কর্তৃপক্ষ। বাজারে আসা সাকিব নামে এক অনলাইন আম বিক্রেতা বলেন, আমরা প্রতি বছর অনলাইনে আম বিক্রি করে থাকি। এবারে আমের দাম একটু কম। মনে হয় অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে ব্যবসা ভালো হবে। তবে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পদাগঞ্জ বাজারে আম বিক্রি করতে আসা আমচাষি আলতার মিয়া বলেন, এবার হাঁড়িভাঙা আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পারায় আমি হতাশ। তিন মণ আমের মধ্যে মাত্র এক মণ বিক্রি হয়েছে। এভাবে আম বিক্রি হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
মৌসুমি আম ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া বলেন, আমগাছে কুঁড়ি আসার সময় ৭ লাখ টাকা দিয়ে বাগান নিয়েছি। বাজারে দাম কম হওয়ায় ৪ লাখ টাকার বেশি আম বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি আমি।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আম পরিবহনের ব্যবস্থাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা না হলে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙাসহ বিভিন্ন জাতের আমবাগান রয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙা আমবাগান রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। জেলায় বিভিন্ন জাতের আমের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। হাঁড়িভাঙা আমের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৯২৫ টন। জেলার বদরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৪০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। রংপুর মহানগর এলাকায় ২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, কাউনিয়ায় ১০ হেক্টর, গঙ্গাচড়ায় ৩৫ হেক্টর, মিঠাপুকুরে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ৫০ হেক্টর, পীরগাছায় ৫ হেক্টর ও তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :