শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০২১, ১১:৪০ রাত
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২১, ১১:৪০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রভাষ আমিন: মহাপরাক্রমশালী পুরুষতন্ত্র!

প্রভাষ আমিন: বাংলাদেশে অনেক নারীবাদী আছেন। তারা নারী অধিকারের কথা বলেন, ন্যায্যতার কথা বলেন, নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দূর করার কথা বলেন। নিজে নারীবাদী না হলেও আমি নারীবাদীদের পছন্দ করি। তাদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে গলা মেলাই। আমি নারীবাদে বিশ্বাসী নই, আমি মানবতাবাদে বিশ্বাসী। আমি মানুষকে কখনো ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ দিয়ে বিবেচনা করি না। আমি চাই, সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাক। নারীবাদীদের কেউ কেউ একটু বেশি আক্রমণাত্মক, কেউ কেউ পুরুষদের গালি-মন্দও করেন। তাদের আক্রমণ বা গাল-মন্দ শুনে আমার খারাপ লাগে না, বরং শারীরিক অবয়বে একজন পুরুষ হিসেবে আমি লজ্জিত হই, নিজেকে অপরাধীই মনে হয়। আমি জানি বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ নারীর প্রতি যে বঞ্চনা করা হয়েছে, তাদের দমিয়ে রাখার যে নানান কলাকৌশল আবিস্কার করেছে পুরুষতন্ত্র; তাতেই নারীদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। মাঝে মাঝে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নির্যাতিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠি যখন নিজের বা নিজেদের বিচার নিজেরাই চান; মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত হই।

যেমন নারীরা নির্যাতিত হলে বিভিন্ন নারী সংগঠন প্রতিবাদ করে, সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলে সংখ্যালঘুদের সংগঠনই আগে প্রতিবাদ করে। কিন্তু কোথাও অন্যায় কিছু হলে তো মানুষ হিসেবে আমাদের সবার তার প্রতিবাদ করা উচিত। নারীর প্রতি কোনো অন্যায়ে নারীর আগে যেদিন কোনো পুরুষ প্রতিবাদ করবে, নির্যাতিত সংখ্যালঘুর পাশে যেদিন সবার আগে সংখ্যাগুরুরা ঢাল হয়ে দাঁড়াবে; সেদিন আমরা নিজেদের পুরোপুরি সভ্য দাবি করতে পারবো। নারীবাদ যেমন আছে, পুরুষতন্ত্রও আছে। এই পুরুষতন্ত্র নারীদের দমিয়ে রাখতে রাখতে নারীবাদ সৃষ্টি করেছে। নারীর চারপাশে হাজারটা দেয়াল। কিছু দেয়াল ধর্ম বানিয়েছে, কিছু দেয়াল সমাজ বানিয়েছে, কিছু দেয়াল পুরুষতন্ত্র বানিয়েছে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, এই পোশাক পরা যাবে না, ওখানে যাওয়া যাবে না, অমুকের সঙ্গে মেশা যাবে না, জোরে কথা বলা যাবে না, হাসা যাবে না, গাছে ওঠা যাবে না, সাইকেল চালানো যাবে না, সাঁতার কাটা যাবে না। দেয়ালের কোনো শেষ নেই। চাইলে এই তালিকা অনেক লম্বা করা যাবে। তবে পুরুষতন্ত্র মানে কিন্তু শুধু পুরুষ নয়। নারীদের অনেকেই মনে মনে পুরুষতন্ত্র লালন করেন। কন্যা শিশুর পায়ে হাজারটা বেড়ি পরানোর কাজটা কিন্তু প্রথমে মা-ই করেন। ছেলে সন্তান যে সংসারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার পাতে মাছের মুড়োটা তুলে দেই প্রমাণটা কিন্তু মা-ই প্রথম দেন। তাই নারী-পুরুষ সবার মাথা থেকে পুরুষতান্ত্রিক ভাবনাটা প্রথম ঝেড়ে ফেলতে হবে। বোঝাতে হবে, সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ, দুজনেই সমান মনোযোগ দাবি করে, দুজনেরই একই ধরনের জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর কোথাও এখন আর নারী-পুরুষের আলাদা কাজ বলে কিছু নেই। নেই যে, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী। এছাড়া নারী বিচারপতি, নারী পুলিশ, নারী সেনাবাহিনী, নারী ডাক্তার সব আছে। ঘোড়ায় চড়া, রিকশা চালানো, গাড়ি চালানো, ট্রেন চালানো, বিমান চালানো, বিমান থেকে লাফ দেয়া, সাগরে ঝাঁপ দেয়া, পাহাড়ে চড়া হেন কোনো কাজ নেই; নারী করতে পারে না। সব কাজ সবাই পারে এবং করেও। আমরা মুখে বলি বটে, নারী-পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে যে কোনো বিচারে নারী পুরুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমি সমান অধিকারে নয়, বিশ্বাস করি ন্যায্য অধিকারে। যুগের পর যুগ পুরুষ নারীকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এখন থেকে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হলেও তো নারী পিছিয়েই থাকবে। তাই নারীকে বেশি অধিকার দিতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পেছনের বঞ্চনা ঠেলে সামনে এগিয়ে আসতে পারে। যেদিন সমান-সমান হবে, সেদিন থেকে যেন সমান অধিকার চালু করা হয়। পরীমনি ইস্যুর পর বাংলাদেশে আবার পুরুষতন্ত্রের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনির ওপর চড়াও হয়েছিলেন, এই অভিযোগ সামনে আসার পর অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, এতো রাতে পরীমনি সেই ক্লাবে গেলেন কেন? কিন্তু কেউ কিন্তু একবারও বলেননি, এতো রাতে নাসির উদ্দিন মাহমুদ সেখানে কী করছিলেন। ৫০ বছরে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলেছি বাংলাদেশে; একজন পুরুষ যেখানে যেতে পারবেন, একজন নারী সেখানে যেতে পারবেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা।

সংবিধানেও তার প্রতিফলন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার অনুশীলন করি না। যে ক্লাব নারীর জন্য নিরাপদ নয়, সে ক্লাবের অনুমোদন কেন দেয়া হবে। গোটা বাংলাদেশকেই সবার জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে। নারীর প্রতিপক্ষ কিন্তু নিছক শারীরিক অবয়বের পুরুষ নয়, সামগ্রিকভাবে পুরুষতন্ত্র। পরীমনি ইস্যুর পর অনেক নারীও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীমনিকেই দোষী সাব্যস্ত করে তার চরিত্র বিশ্লেষণে উঠেপরে লেগেছেন। পরীমণির চরিত্র কতো খারাপ, তিনি কোন ক্লাবে গিয়ে কী করেছেন, তিনি কার কার সঙ্গে কোন দেশে গিয়েছেন; এসব উদাহরণ টেনে আমরা পরীমনিকেই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছি। নাসির উদ্দিন মাহমুদের যেন কোনো দোষই নেই। ধরে নিচ্ছি আপনাদের অভিযোগ সত্য, তাই বলে কি পরীমনিকে দেখলেই তাকে হেনস্থা করার অধিকার জন্মে যায় আপনার? যে পুরুষ ক্লাবে গিয়ে মদ খেয়ে নারী দেখলেই ঝাপিয়ে পরতে চায়, ক্লাবে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করুন। ক্লাব মানেই সামজিক যোগাযোগ, আড্ডা, খেলাধুলা। এটা নারী-পুরুষ সবার জন্য। ক্লাব মানে কিন্তু মদ খেয়ে মাতলামি করা নয়। মহাপরাক্রমশালী পুরুষতন্ত্র ঠিক করে দিচ্ছে, নারী ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না, নারী ইউএনও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহে গার্ড অব অনার দিতে পারবে না, নারী ক্লাবে যেতে পারবে না। নারীদের নিয়ে আপনাদের যদি এত সমস্যাই হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন করে ফেলুন, হেফাজতিদের ক্ষমতায় নিয়ে আসুন। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে বৈষম্য চলবে না। নারী-পুরুষ সবার জন্য সবসময় একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়াই আমাদের আকাক্সক্ষা।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়