আবু রুশদ: মীর জাফরের কোনো পরিচয়ের দরকার নেই। অনেকেই হয়তো জানেন না পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারের ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন বাঙালি ও মীর জাফরের গ্রেট গ্রান্ড সন। ইস্কান্দার মির্জার শেষ জীবিত পুত্র হুমায়ুন মির্জা ইন্তেকাল করেছেন আমেরিকায়। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
অর্থাৎ মীর জাফরের একজন বংশধর ইহলোক ত্যাগ করলেন। হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট মরহুম হুমায়ুন মির্জা ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ১৯৮৮ সালে অবসরে যান। তিনি তার পিতা ও মীর জাফর আলী খানের বংশ নিয়ে একটি ঢাউশ বই লেখেন, যাতে পাকিস্তানেরও অনেক অজানা ইতিহাস, সামরিক শাসন জারি, ইস্কান্দার মির্জাকে জোর করে দেশত্যাগ ইত্যাদি প্রসঙ্গ বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
বইটির নাম- ‘From Plassey to Pakistan: The Family History of Iskander Mirza’ বইটি আমার সংগ্রহে আছে। কিনেছিলাম ইসলামাবাদ থেকে। যাহোক, হুমায়ুন মির্জার পিতা ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন এই উপমহাদেশ থেকে ব্রিটেনের অভিজাত মিলিটারি একাডেমী স্যান্ডহার্স্ট হতে রাজকীয় কমিশন পাওয়া প্রথম অফিসার। এর আগে ব্রিটিশরা অফিসার পদে এই উপমাহদেশের কাউকে নিতো না। শুধু সৈনিক, এনসিও ও জেসিও হিসাবে ভারতীয়দের গ্রহণ করতো। সে হিসেবে সুবেদার মেজর ছিল সর্বোচ্চ পদ। কিন্তু ইস্কান্দার মির্জার কমিশনপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তা পাল্টে যায়। তিনি হলেন প্রথম নেটিভ অফিসার ভারতের। ইস্কান্দার মির্জা সেই হিসেবে পুরো ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে আর্মি নম্বরে সবার সিনিয়র অর্থাৎ ১।
তিনি কমিশন পান ১৯২০ সালের ১৬ জুলাই। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার পরে তার চাকরি সিভিল প্রশাসনে ন্যাস্ত করেন। পাকিস্তান হওয়ার পর কর্নেল ইস্কান্দার মির্জা প্রতিরক্ষা সচিব মনোনীত হন। পরে তাকে মেজর জেনারেল পদ দেওয়া হয়। তিনি একসময় প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ১৯৫৬ সালে। তিনি পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট। জাতিতে বাঙালি হলেও মীর জাফরের বংশধর পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এর আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তারেন গভর্নরও ছিলেন।
তিনিই ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করেন। কিন্তু জেনারেল আইয়ুব খান তাকে হটিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নেন ও তাকে বৃটেনে পাঠিয়ে দেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে তিনি মারা যান বৃটেনে। তখন পাক সরকার তার লাশ পাকিস্তানে কবর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইরানের শাহ তার ব্যক্তিগত বিমান পাঠিয়ে লাশ ইরানে নিয়ে আসেন ও সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্য়াদায় দাফন করেন। কারণ ইস্কান্দার মির্জার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ইরানী নাহিদ আফগামি। পাকিস্তানের ইরানী দূতাবাসে সামরিক এ্যাটাশের স্ত্রী নাহিদকে মির্জা বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী রিফাত মির্জার ঘরে জন্মেছিলেন হুমায়ুন মির্জা। এসব বিশাল ইতিহাস। তবে ভাগ্যের কি পরিহাস, বাঙালি ইস্কান্দার ও তার কোন বংশধরের কবর বা বাস বাংলাদেশে হয়নি। বর্তমানে তার এক মেয়ে করাচিতে বসবাস করেন।
হুমায়ুন মির্জাও কখনো পাকিস্তানে বসবাস করেননি। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন এক ব্রাজিলিয়ান মহিলাকে।প্রথমে বিয়ে করেছিলেন পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিলডার্থের মেয়েকে ১৯৫৪ সালে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে ছিল তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। এর কারণ ছিলো ইরানী কানেকশন। নাহিদ মির্জার কাজিন হলো নুসরাত ইসপাহানি যাকে বিয়ে করেন জুলফিকার আলী ভুট্টো! পাকিস্তানের দুইজন ফার্স্ট লেডি তাই ছিলেন সরাসরি ইরানী। নাহিদ মির্জা ও নুসরাত ভুট্টো। পাকিস্তানের অনেকেই সন্দেহ করেন যে ইরানী গুপ্তচর সংস্থা নাহিদ আফগামিকে লেলিয়ে দিয়েছিল ইস্কান্দার মির্জার পিছনে হানি ট্রাপ করার জন্য।
[১] হুমায়ুন মির্জা
[২] হুমায়ুনের লেখা বই
[৩] মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা
[৪] পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিলডার্থের মেয়েকে বিয়ে করেন হুমায়ুন মির্জা...]
আপনার মতামত লিখুন :