আরিফ জেবতিক: ক্লাব ব্যবসা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাম্প্রতিক ‘হট’ ব্যবসা। অলিতে গলিতে নানান কিসিমের ক্লাব গড়ে উঠছে। এই ক্লাবগুলো লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কাজ করে। কেউ কেউ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে, বাকিরা স্টার্টআপ হয়ে এখনও খাবি খাচ্ছে। ক্লাব ব্যবসার সুবিধা হচ্ছে ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট খুব কম। প্রথমে ৫০ জন যোগাড় করে ৫ লাখ টাকা করে শেয়ার/মেম্বারশিপ দিন। আড়াই কোটি টাকা দিয়ে এবার জুতসই জায়গায় একটা ভবন ভাড়া নিয়ে পরবর্তী ফেজের মেম্বারশিপের দাম ১০ লাখ করে দিন। এই পর্যায়ে এসে প্রভাবশালী কয়েকজনকে বিনা টাকায় মেম্বারশিপ দিয়ে বড় বড় পদে বসাতে হয়। এখন এই প্রভাবশালীদের দোহাই দিয়ে সরকারি জায়গা ‘বরাদ্দ’ নেওয়া সহজ হয়ে যায়। সেখানে গড়ে উঠবে ক্লাব হাউজ।
১ লাখ স্কয়ারফিটের একটা ভবন তৈরি হয়ে যাবে ২০ কোটি টাকায়। (এজন্য মেম্বারশিপ বিক্রি করবেন ১০ লাখ টাকা করে ২০০টি। তবে চিন্তার কিছু নেই, এই পর্যায়ে এসে অনেকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ১০টা/২০টা করে মেম্বারশিপ কিনে রাখে, যা পরে বেশি দামে বিক্রি করে) ভবন আর বার লাইসেন্স পেয়ে গেলে আপনাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না। মেম্বারশিপ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় অনায়াসে বিক্রি হতে থাকবে। কিছু কিছু ক্লাবের মেম্বারশিপ ১ হাজার ছাড়িয়ে যায় তরতর করে। পরের ৮০০ মেম্বারশিপ গড়ে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে ১৬০ কোটি টাকার ব্যবসা! ঢাকার অধিকাংশ ক্লাবই মাত্র কয়েকটি পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে, কারণ তারা এই ব্যবসার মারপ্যাচ বুঝে গেছে।
পুরোনো ক্লাবগুলোতে নতুন সদস্যপদ কদাচিৎ দেওয়া হয়, তাই সেই ক্লাবগুলোর মেম্বারশিপ কোটি টাকায় হাতবদল হয়। পুরনোরা রিটায়ার করে, উঠতি বড়লোকরা সেই মেম্বারশিপ চড়া দামে কিনে নেয়। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের অধিকাংশের কাছে এই এমাউন্টগুলো অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু আপনি আমি যে দুনিয়ায় থাকি আর ‘অন্যরা’ যে দুনিয়ায় আছে সেই দুই দুনিয়ার ফারাক এতো বিস্তর, যে আমাদের মাথাতেও কুলোয় না অনেক সময়। তবে এসব ক্লাবকে যেভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে, তা অধিকাংশ সময়েই ঠিক নয়। ক্লাবগুলোতে একটা ডিসেন্ট পরিবেশ থাকে, ড্রেসকোড বেশ কড়াকড়িভাবেই মেনটেন করা হয়, সদস্যদের কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে বহিষ্কারও করা হয়। সদস্যদের অধিকাংশই আসলে ক্লাব ব্যবহার করেন টেনিস, জিম, সুইমিংপুল, রেস্টুরেন্ট এসবের কারণে।
যেভাবে দেশে শতশত কোটিপতি বাড়ছে, এসব ক্লাবও বাড়তেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মধ্যবিত্তদের জন্য কেউ কোথাও কিছু ভাবছে না। সরকারের উচিত মধ্যবিত্তের ব্যবহার উপযোগী কিছু ফেসিলিটি তৈরি করা। ঢাকা শহরে খেলার মাঠ নেই, এখন আর আশা করেও লাভ নেই। তবু মধ্যবিত্তরা যাতে একটা সুইমিংপুল পায়, একটু খোলামেলা পরিবেশ পায়, এরকম সহজলভ্য ফ্যাসিলিটি কিছু তৈরি করার চেষ্টা করা উচিত। ঢাকা শহর একটি স্থবির শহর, বিনোদনহীন শহর-এই শহরের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু ফ্যাসিলিটি তৈরি করা জরুরি।
লেখক : অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনার মতামত লিখুন :