নিউজ ডেস্ক: আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছেন। এ কর দিতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের। তাদের লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এর পর থেকে এই কর নিয়ে রাজপথ থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে রাজপথে এর বিরুদ্ধে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী এবং 'নো ভ্যাট অন এডুকেশন'-র নেতারা আশঙ্কা করছেন, বাজেটে মালিকদের ওপর কর ধার্য করার প্রস্তাব করা হলেও, এটি মালিকরা নিজের পকেট থেকে দেবেন না। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে আদায় করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আরেক দফায় বাড়বে। তদুপরি মহামারি করোনাকালে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় নতুন করারোপের প্রস্তাবনা 'মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ' হিসেবেই চিহ্নিত হবে। যদি অর্থমন্ত্রী এটি প্রত্যাহার না করেন, তবে এটি শিক্ষার্থীদের উপরই বর্তাবে। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হারাবেন।
জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকরাই এবারের 'নো ভ্যাট অন এডুকেশন'-র আন্দোলনে পেছন থেকে সমর্থন ও ইন্ধন দিচ্ছেন। সমিতির আহ্বায়ক শেখ কবীরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের হুমকি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক হলে, আমাদের বাধা দেওয়ার কি আছে। তারা তাদের কথা বলছে।
এসব প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায় আর্থিকভাবে সামান্য সামর্থ্যবান অভিভাবকরা সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন কতটুকু পূরণ করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণেই বাজেট উপস্থাপনের দিন থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যান-প্রত্যাহারের দাবি করে আসছে। প্রত্যাহারের দাবিতে ইতোমধ্যে ঢাকা- চট্টগ্রামে মানব-বন্ধন হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এ দাবিতে আরও জোরালো প্রতিবাদ করতে শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রম্নপে এ নিয়ে নানা আলোচনা ও সংঘবদ্ধ হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষাবিদরাও এ করারোপের বিরোধিতা করে এবং প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন। একই প্রস্তাব করা হয়েছিল ২০১৫ সালেও। তখন উচ্চ আদালতে রিট করে
সেটি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই ওই অর্থবছরে আর কর দিতে হয়নি। অপরদিকে এর আগে ২০১৭ সালে প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের 'টিউশন ফি'-র উপর। ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামেনি। ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাজার হাজার শিক্ষার্থীর রাজপথে নেমে আন্দোলন করার কারণ ছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরাসরি করের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেভাবেই বাজেট পাস হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে সেপ্টেম্বরে। যখন তাদের 'টিউশন ফি'-র উপর করসহ আদায় শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদিও বাজেট পাস হবার পরও নির্বাহী আদেশে শিক্ষার্থীদের অবরোধ-আন্দোলনের মুখে সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কর আদায় করার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা তাদের আয়ের লভ্যাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর দেবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন 'এসোসিয়েশন অফ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ' বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতি এ করারোপের বিরোধিতা করে বলেছে, বাজেটের প্রস্তাবনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থি। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। বাজেট পাসের সময় এটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
এদিকে, ১৫ শতাংশ করারোপের প্রতিবাদে 'নো ভ্যাট অন এডুকেশন'-নামের সংগঠনটি আবারও সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংগঠনটির বর্তমান নেতারা বলেছেন, শিক্ষার উপর কোনো করারোপ হতে পারে না। উচ্চ শিক্ষা শুধু নয়, শিক্ষার্থীদের উপরও যদি কোনো ধরনের করারোপ করা হয়, তা প্রতিহত করতে তারা রাজপথে নামবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ ধরনের করারোপকে 'সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতি' বলে অভিহিত করে বলেছেন, বাজেটে সরকার প্রতি বছরই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাকে জটিল ও ধনিক শ্রেণির 'বাণিজ্যের পণ্যে' পরিণত করতে চাইছে সরকার ও নীতি-নির্ধারকরা। এটি মেনে নেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা বলেন, 'এটি যে কোনো মূল্যে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করা হবে।'
জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকেও সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের চিত্র ছিল ভিন্ন। সে সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেসব শিক্ষার্থী ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের খুঁজে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি ও নানাভাবে সতর্ক করেছিল। এবার তাদের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা 'ফেসবুক গ্রম্নপে' সংগঠিত হচ্ছে। জানা গেছে, বাজেট পাসের দিন অথবা তার আগে-পরে রাজধানীতে ২০১৭ সালের ন্যায় বড় ধরনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা ভাবা হচ্ছে।
সূত্র: যায়যায় দিন