সুজন কৈরী: [২] রাজধানীর বনানীর কামাল আতার্তুক রোডে অবস্থিত অভিজাত রেষ্টুরেন্ট টেপটেলস ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করছিল। ভুয়া চালানে নির্ধারিত ১৫শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগার জমা দেয়নি। এভাবে পাঁচ মাসে প্রায় ৩৫ লাখ ভ্যাট আত্মসাৎ করেছে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযানে তথ্য পাওয়া গেছে।
[৩] ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বুধবার ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
[৪] বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পস মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন ৬.৩ চালান দেওয়ায় ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়।
[৫] অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া ৬.৩ চালান ইস্যু করে ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দা দল রেস্টুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করে।
[৬] গোয়েন্দাদের তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
[৭] তদন্ত অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিটি খাবারের বিলে ‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এপ্লাইড’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং এতে ১৫শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। অথচ এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা বলছে, ভ্যাট আইন অনুযায়ী যে কোনও ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরুর আগেই যথাযথভাবে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং নির্ধারিত ৬.৩ ফরমে ক্রেতাদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে। সেই সঙ্গে করমেয়াদ শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে রিটার্নের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ টেপটেলস রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ছাড়া গত ৫ মাস ধরে ব্যবসা করছে এবং নিবন্ধন ছাড়াই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট কর্তন করছে।
প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭ টাকা। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৫ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২শতাংশ হারে সুদ ২ লাখ ৯ হাজার ৭৪৫ টাকা প্রযোজ্য।
তদন্তকালে ভ্যাট গোয়েন্দা দেখতে পেয়েছে, খাবারের বিলে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এপ্লাইড লেখা থাকলেও স্থানীয় ভ্যাট অফিসে এমন আবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের জিএম মো. আনিস জানান, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনো কাগজপত্র সংগ্রহ করছে। ভ্যাট নিবন্ধন নেই, কিন্তু ক্রেতাদের কাছে বিলের মাধ্যমে কেন ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নি তিনি।
ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বুধবার ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। আত্মসাৎকৃত ভ্যাট আদায় ও এ সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানা আরোপের জন্য মামলাটি করা হয়েছে।
তদন্তে উদ্ঘাটিত এই অপরাধ নিষ্পত্তির জন্য মামলার প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :