হান্নান প্রধান: মানব সভ্যতায় কৃষির শুরুই হয়েছে ভূ-উপরিস্থ পানি (Surface Water) ব্যবহার করে। প্রথম দিকে তা নালা বা ড্রেনের মাধ্যমে নানা স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে জমিতে সেচের প্রক্রিয়া শুরু করে মানুষ। কালের বিবর্তনে আর বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অনেক প্রযুক্তি আবিষ্কার হলেও এই ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারই সর্বাপেক্ষা কার্যকরী, টেকশই ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এই ভূ-উপরিস্থ পানির উৎসের মধ্যে কৃষিকাজে সেচের উপযোগী পানির প্রধান উৎস হল নদী নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওড়, জলাশয় ইত্যাদি। কিন্ত একটা নদীর পানি ব্যবহার করে কতটুকু জমিতে কৃষি কাজের সেচ দেয়া সম্ভব?
কতদূর ই বা তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা যায়? যায়, অনেক দূর, এমনকি আমার আপনার চিন্তারও বাইরে। বিজ্ঞান তার লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্যকে করেছে সাধন, অজেয়কে করেছে জয়। আমাদের দেশেই এখন পর্যন্ত কেবল তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্ট থেকে প্রায় ৭৫০ কিঃমিঃ সেচ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষিতে ভূ-উপরিস্থ নদীর পানি ব্যবহার করে সেচ দেয়া হচ্ছে। সেচ দেয়া হচ্ছে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর যা একরে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৫০ একর বা শতকে হিসেব করলে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৫ হাজার শতক জমি। চিন্তা করেছিলেন কি????? করার কথা না, জানার কথাও খুব কম, আমাদের দেশের মূল চালিকাশক্তি কৃষি হলেও আমরা নতুন জেনারেশন কৃষি থেকে অনেক দূরে।
আমাদের দেশে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক নদী, আর পানিসম্পদের পরিমাণ তো অফুরন্ত। সেদিকে আর না আগাই, যা বলছিলাম। তো একটা নদীর পানি যখন সেচ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উচু জায়গা থেকে নিচু জায়গায় নিতে যাবেন, পথে নানা জটিলতা, বিপত্তি আসবে। তেমনি এক বিপত্তি হল সেচখালের পথে আরেকটা নদী, তার তলা হয়তো খালের চেয়ে অনেক উচু কিংবা নিচু। তখন সেচখাল দিয়ে আর নদীকে পার করা যায়না। সেজন্য কৃষি সভ্যতার প্রাথমিক দিকে নদীর পানি দিয়ে বেশিদূর সেচ দেয়া যায়নি। বিজ্ঞান এই সমস্যার সমাধানও দিয়েছে, কিরকম সমাধান? সেচখালকে হয় নদীর উপর দিয়ে নতুবা নিচ দিয়ে পার করা। অনেকটা ফ্লাই ওভার কিংবা আন্ডার পাসের মত। সাইফোনিক একশন কাজ করে বলে এটাকে নাম দেয়া হয়েছে সাইফুন। এত কথা বলার কারণ আসলে আজ এরকম ই একটা সাইফুনে গিয়েছিলাম, তিস্তা সেচ প্রকল্পে। দেশের সর্ববৃহৎ সাইফুন, বুড়িতিস্তা সাইফুন। যেখানে বুড়িতিস্তা নদীর নিচ দিয়ে তিস্তা নদীর পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে, একই পয়েন্ট কিন্তু কারো পানি কারো সাথে মিশেনা, কেউ দেয়না কারো চলায় বাগড়া।
কি সুন্দর!!!! দৃষ্টি মনোহর!!!!
কি কারুকার্য!!!! কি কৌশল, প্রকৌশল!!!!
পেশাগত কাজে এই বুড়িতিস্তা সাইফুন আবার আমারই জুরিসডিকশনে, যার দেকভালের কিছু দায়িত্বও আমার উপর বর্তায়। গর্বিত না হয়ে উপায় আছে????
লেখক: উপ[বিভাগীয় প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড
আপনার মতামত লিখুন :