শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৫ জুন, ২০২১, ০৫:২৫ বিকাল
আপডেট : ১৫ জুন, ২০২১, ০৫:২৫ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: বাজারে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ‘অজুহাত’ প্রস্তাবিত বাজেট !

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: গত তিন জুন তারিখে সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের নতুন বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটি এখন সংসদ সদস্যদের আলোচনা-পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। যদিও আমাদের দেশে দীর্ঘদিন থেকে সংসদে উত্থাপিত বাজেট নিয়ে সংসদ সদস্যদের মধ্যে খুব বেশি সংখ্যককে পাওয়া যায় না যারা বাজেটের চুলছেড়া বিশ্লেষণ করতে পারেন। দুঃখজনক হলেও এটি সরকারি ও বেসরকারি সদস্যদের মধ্যে খুব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে যেটি সবসময় ঘটে এসেছে তা হচ্ছে অর্থমন্ত্রী যেদিন বাজেট বক্তৃতা সংসদে প্রদান করেন, তারপর দিন থেকেই বাজারে নানা অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটাতে দেখা গেছে।

এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বাজারে বাজেটের নাম ব্যবহার করে যেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে, বাস্তবে বাজেটে সেগুলোর আমদানিমূল্য বৃদ্ধির তেমন কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেল, মশলা, কিছু পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল, খাদ্যদ্রব্য ও শাকসবজিরও দামও ফড়িয়া এবং দোকানিরা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোক্তারা অধিক মূল্যের কারণ জানতে চাইলে দোকানিদের প্রথম উত্তর হয়- বাজেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। অভিজ্ঞ ক্রেতা যখন জানতে চায়, বাজেটের কোন জায়গায় তুমি এই মূল্য বৃদ্ধি দেখেছো ? তখন তার উত্তর ঘুরে গিয়ে দাঁড়ায় কখনো সরবরাহ কম, কখনো বৃষ্টি বাদল, কখনো বড় আড়তদারদের সিন্ডিকেটদের কথা।

সিন্ডিকেট নামক শব্দটি এখন কাঁচাবাজার থেকে বড় বড় শপিংমল পর্যন্ত সর্বোত্র উচ্চারিত শব্দ। সবাই একে অপরের দিকে আঙুল তুলে সিন্ডিকেটের কথা উচ্চারণ করে থাকেন। নিজেরা সবাই সাধু সেজেছেন ! অন্যরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে নেওয়ার সিন্ডিকেট করছে। সিন্ডিকেট তো অবশ্যই করা হচ্ছে। বড় বড় আড়তদাররা ধান-চালের সিন্ডিকেট করতে মোটেও ভুল করেন না। তারা বুঝতে পারেন কখন সরকারের গোদামে টান ধরবে। সেটি বুঝেই তারা সিন্ডিকেটের নামে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। চালের দাম তারা বাড়ান, মধ্যস্বত্বভোগীরা বাড়ান, বাজারের খুচরা দোকানিরাও বাড়ান। বাড়ানোর হিসাবে কেউ তারা এক সেকেন্ড দেরী করেন না। কিন্তু যখন কোনো পণ্য সামগ্রী সরবরাহ বেড়ে যায়, কিংবা আমদানি বেড়ে যায় তখনই তাদের এক কথা- আমার দোকানের পণ্য আগের মূল্যে কেনা। আমি কেন কম দামে বিক্রি করতে যাবো। কিন্তু দাম বাড়ানোর সময় এই নীতিবোধ তাদের থাকে না।

এবার ফিরে আসি বাজেটের কথায়। বাজেট এখনো পাসই হয়নি। সংসদে কেবল তা উত্থাপিত হয়েছে মাত্র। তাতেই একবার মূল্য বৃদ্ধি বাজারে ঘটে গেছে। আবার যেদিন বাজেট পাশ হবে তারপর দিন থেকে কিছু কিছু জিনিসের দাম তো বাজাটের অজুহাতেই বৃদ্ধি করা হবে। এক মুরগি তারা কয়বার জবাই দিতে চান ?

আসলে এসব যুক্তি এখানকার বাজারে কোনো মূল্য পায় না। এর কারণ হচ্ছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন নীতি নৈতিকতা নেই, নিয়ন্ত্রককারীদেরও তা নেই। যারা বাজার তদারকি করেন, তারা কতোটা স্বচ্ছতা ও সততার পরিচয় দেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। দোকান থেকে দোকানে মাশোহারা তোলার অদৃশ্য নিয়ম তারাই চালু করে রেখেছেন। এনবিআরের কর্মকর্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে কতো টাকা কর সরকারের খাতায় আদায় করে জমা দেন আর কতো টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে নেন সেটি কী খুব অজানা বিষয়? সুতরাং বাড়তি টাকা দোকানিরা ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় করেন। এছাড়া বিভিন্ন শপিংমল, বড় বড় দোকানের ভাড়া নিয়ে রয়েছে এক গোপন কারসাজি। মালিকরা লাখ লাখ টাকা মাসিক ভাড়া হিসাবে আদায় করলেও সরকারকে অনেক কম ভাড়ার চিত্র দেখান। কিন্তু ভাড়াটিয়াকে দিতে হয় অনেক বড় অঙ্কের টাকা। সেই অর্থ উপার্জন করতে ব্যবসায়ীকে অধিকমূল্যে পণ্য বিক্রি করতেই হয়।

সরকার দুদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়- [১] প্রকৃত রাজস্ব হারাচ্ছে [২] বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে ক্রেতাসাধারণের আস্থা হারাচ্ছে। বাজারে এখন করোনাকালের ব্যয় পুষিয়ে নেওয়ার হিড়িক চলছে। বিভিন্ন আমদানিকারক, আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী করোনাকালে লকডাউন করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সেটি পুষিয়ে নিতেও এক এক পণ্যের দাম এক এক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায় অজুহাতের কোনো শেষ নেই। কিন্তু আখেরে কষ্ট পাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ। মধ্যবিত্ত কিছুটা কাঁটছাট দিয়ে চলেন, উচ্চবিত্তদের কাছে বাংলাদেশের বাজার মূল্য তেমন দ্রর্তব্যে নেওয়ার বিষয় নয়। এছাড়া চোরাকারবারি, ঘুষ-দুর্নীতিবাজ, দালালচক্র, প্রতারকও প্রভাবশালীদের কাঁচা অর্থের কোনো হিসাব নেই। সুতরাং দেশে বাজারব্যবস্থা এতোসব অজুহাত, ডানহাত, কালোহাত ইত্যাদির কাছে জিম্মি হয়ে আছে। বাজেট নাম মাত্র ! পরিচিতি : শিক্ষাবিদ। অনুলেখক : আমিরুল ইসলাম

 

 

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়