ফারুক ওয়াসিফ: ‘আ টেল অব থ্রি উইমেন’ ভিট্টরিও ডি সিকার টু উইমেন ছবির জায়গায় নাম দিলাম থ্রি উইমেন। সেখানে মা-মেয়ে ধর্ষিত হয় একইসঙ্গে। এখানে পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। তবে প্রমাণিত ব্যাপার যে একই সময়ে একজন বস্ত্রশ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে বেতন চাওয়ার জন্য। গুলিটা পুলিশের বলে অভিযোগ। একই সময়ে এক আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একই সময়ে এক ইসলামী বক্তাকে ৩ সঙ্গীসহ নিখোঁজ হতে দেখেছি; তোহা নামের ওই বক্তার জননী সন্তানের জন্য কাঁদছেন। না, এই গল্পটা তিন নারী ও এক মায়ের। না, এই গল্পটায় সেই মাকে আনা হবে না, পরীমনি যাঁর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। এই গল্পটা তিন কন্যা ও গুম হওয়া যুবকদের মায়ের।
ভবিষ্যতের শহীদ মিনারে মা ও ছেলের পাশে কোনো কন্যাকেও রাইখেন প্রতীক হিসাবে। এই দেশে একাত্তরে নারী ধর্ষণ যে মাত্রায় হয়েছে, তাতে আশা করা হয়েছিল যে স্বাধীন দেশে পাকিসেনাদের মতো আচরণ দমন করা হবে। কিন্তু তারা যুদ্ধকালে যা করতো, তা এরা আরামের সময়ে করে। ফ্যাসিবাদের প্রধান শিকার হয় শ্রমিক ও নারী। কারণ, তাদের মুনাফা ও প্লেজারের খনি বলে ভাবে পুরুষালী ডাকাইত্যা পুঁজিবাদ। হৈ হল্লা করলে দম লম্বা করেন। না হলে, কালকেই ইস্যু পেয়ে যাবেন মন ও মতি ঘোরানোর।
যারা ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের মন নিয়ে বসে আছে, তাদের বাতিল করিয়েন না, তাদেরও যুক্তি আছে। তাদের সন্দেহকে পাত্তা দিয়ে উত্তর দেন। শক্তিশালী যুক্তি আর অকাট্য প্রমাণের সামনে তারা থমকাবে। খামাখা সব ইস্যুতে পশ্চাদ্দেশের মতো বিভক্ত হয়ে যায়েন না। বিভক্তির ফুটায় ছিপি দিলে মুখও বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু, হু!
আরেকটা কথা, নারীর যৌনায়ন শুধু মার্কেটের বিষয় না, ধর্ম থেকে শিল্প সবাই করে। তেমনি পুরুষের যৌনায়নও এমনকি শ্যালো মেশিনের বিজ্ঞাপনেও পাওয়া যায়। জীব মাত্রই যৌন। কেউ যৌনতাকে তার ক্ষমতায়নে ব্যবহার করলে দোষ কী? দোষ সেখানেই যেখানে সে কাউকে ভিক্টিম বানায়। সমাজে নারী নির্যাতন আছে, স্বল্পমাত্রায় পুরুষ নির্যাতনও আছে বৌ বা প্রেমিকা বা হানি ট্র্যাপ দ্বারা, কিন্তু নারীকে দাবিয়ে রাখার বড় সত্য তাতে চাপা রাখা যায় না। কেউ যৌনতাকে সিঁড়ি বানালে আপনি তফাতে খাকবেন যদি নীতি বা রুচিতে না মেলে। কিন্তু বিচার করার আপনি কে? পরীমনি যদি ট্র্যাপ সাজায়, তার মানে সেটা পরীমনির ক্ষমতায় কুলায় না, তার পেছনে অন্য কেউ আছে। কিন্তু মুনিয়া তো মারাই গেলো, তার হত্যার পেছনে কে? লেখক ও সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :