শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০২১, ০৫:৪৪ বিকাল
আপডেট : ১৩ জুন, ২০২১, ০৫:৪৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] রামগঞ্জে এক ইউনিয়নেই ১১টি ইটভাটা ভাটার ধোঁয়ায় এলাকা ধূসর

মনির হোসেন : [২] রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ১১টি ইটভাটা। একযুগ ধরে স্থানীয় গ্রামের লোকজন এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও কাজের কাজ হচ্ছে না। ভাটাগুলোতে দিনরাত ইট পোড়ানোর উৎসব চলছে। ইট পোড়ানোর সময় ধুলা আর ধোঁয়ায় ধূসর হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। বুক চেতিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় মাটি ও ইট বোঝাই নিষিদ্ধ ট্রলি। এরই মাঝে গ্রাম বাসীর বসবাস। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আর খেলাধূলা। এ চিত্র রামগঞ্জ উপজেলার ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের।

[৩] উপজেলার পৌর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে ভোলাকোট ইউনিয়ন। পাঁচ বর্গ কিলোমিটারের এই ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৪০হাজার ৭০৫জন। উপজেলার পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও ১০টি ইউনিয়নে ২১টি ইটভাটা এর মধ্যে ভোলাকোট ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১১টি ইটভাটা। এ কারণেই গ্রামের চিত্র এখন পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিনই। গ্রামের মানুষ গুলোর দীর্ঘশ্বাস যেন বেড়েই চলেছে। এ এলাকার দেহলা আলীপুর শাকপাড়া,আথাকরা, রাজারামপুর, নোয়াপাড়া, নাগমুদ, টিউরি, হাঁপানিয়া, ভোলাকোট, লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এ ইউনিয়ন-আলীপুর-দেহলা সড়কে মরে গেছে বেশ কিছু শিশু গাছ। পাশের বসতবাড়ি গুলোতে কিছু সুপারী গাছ মরে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া ১১ ইটভাটার মধ্যে ৮টিতেই ইট পুড়তে দেখা যায়। আইন অনুযায়ী লোকালয়, কৃষিজমি ও টিলার নিদিষ্ট দুরত্বে ইটভাটা নিষিদ্ধ।

[৪] ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ জন্য আইনও করা হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩-এর৫(১) ধারা অনুযায়ী ইট তৈরির জন্য পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই এসব মানছেন না রামগঞ্জে ইটভাটার মালিকরা। সব ইটভাটার পাশে লোকজনের বসত বাড়ি ও কৃষি জমি। ভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে প্রশাসনে অভিযোগ দিলেও এসব কানে তোলেননি মালিককেরা। গত ১৫বছরে রামগঞ্জ উপজেলার গড়ে উঠেছে ২১টি ইটভাটা। এর মধ্যে ভোলাকোট ইউনিয়নেই ১১টি ইটভাটা । সাহারপাড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে আথাকরা গ্রাম। এ গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, ইটভাটার কারণে বছরের আট মাস নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগে বসবাস করেন। ভাটার কালো ধোঁয়ায় বাতাস দুষিত হয়ে যায় এলাকার পরিবেশ।

[৫] দেহলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন জানান, ইটভাটার মাটি ও ইট নিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রলি চলাচলের কারণে গ্রামের সড়ক গুলোর অবস্থা লন্ডভন্ড। এক যুগ ধরে গ্রামের লোকজন এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে এলেও কোন কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ইট ভাটার মালিক মুরাদ হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ইটভাটা গুলো অনেক আগেই করা হয়েছে। তখন গ্রামে বসতি কম ছিল। আর সব কাগজপত্র তাদের আছে বলেও তারা দাবি করেন।

[৬] জানতে চাহিলে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, ইটভাটা গুলো আগেই গড়ে উঠেছে। লোকজনের অভিযোগের পর সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নে মেসার্স নাহার ব্রিকস,মেসার্স এসএস ব্রিকস ও মক্কা ব্রিকস মালিকে সাড়ে ৫লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ইটভাটা গুলো পূনরায় যেন অনুমোদন না পায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

[৭] ইতো পূর্বে দেহলা গ্রামের মদিনা ব্রিকসে ইট পোড়ানোর চুল্লির দেয়াল ধসে দুই ভাইসহ তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালত করে ইটভাটার মালিক আমির হোসেন ডিপজলকে ৬মাসের কারাদণ্ড সে সঙ্গে তার ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়