শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০২১, ০১:২৯ দুপুর
আপডেট : ১৩ জুন, ২০২১, ০১:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কামরুল হাসান মামুন: তাহলে বুঝুন দেশ কতটা নষ্ট হয়েছে! মসজিদ বানাবে সেখানেও দুর্নীতি!

কামরুল হাসান মামুন: গত পরশুই প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন। আর গতকালকেই জানতে পারি হাত দিলেই উঠে আসছে মডেল মসজিদের পলেস্তারা, ফেটে যাচ্ছে টাইলস। শুধু তাই না। এমন কি পিলার ও দেয়াল বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে। আর আমরাতো জানি বাংলাদেশের সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুলগুলোর ভবন নির্মাণে কি ভয়াবহ দুর্নীতি হয়। মাত্র কয়েকদিন আগেই জেনেছি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে গৃহহীনদের দেওয়া ঘরও ধসে পড়েছিল উদ্বোধনের আগেই। কয়েক বছর আগের সংবাদ নিশ্চই মনে আছে যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে।

তাহলে বুঝুন দেশ কতটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদ বানাবে সেখানেও দুর্নীতি। যারা কাজটি করেছে খোঁজ নিয়ে দেখুন রুটিন করে নামাজ পড়তে ভুল হয় না কিন্তু দুর্নীতি করতে ছারে না। যেখানে মানুষ পুণ্যের জন্য দান করে সেখানে এরা দুর্নীতি করে অবকাঠামো বানিয়ে শত শত মানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার মানে এরা লোক দেখানো নামাজই পরে পরকালে বিশ্বাস ফিশ্বাস আসলে করে না। মানুষ পুরস্কার দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গুণেমানে ওটা যেন সেরা হয়। আর সেই পুরস্কার যদি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সেটার জন্য অতিরিক্ত নজরদারি আশা করা কি অন্যায়? আর পুরস্কারটি যদি হয় গরিবদের জন্য তাহলে এর নির্মাণে আরো মনোযোগ ও সততা আশা করা উচিত। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেশের মানুষ না। বিদেশিদের পুরস্কারের ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে হয় তবে কেমন লাগে?

এতসব অন্যায় দুর্নীতি কেন ঘটে যাচ্ছে? কারণ দেশের নীতিনির্ধারকরা ঠিক নাই। তারা দুর্নীতি করে। বড় বড় আমলারা যদি দুর্নীতি করে ক্যানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি কিনে, এমপি মন্ত্রীরা যদি দুর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করে, ক্ষমতাবান হওয়ার কারণে যদি খুন করেও রাষ্ট্রের বিশেষ কৃপা পায় সেই দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে সততা কিভাবে আশা করব?

একটা সময় ছিল মানুষ যখন স্কুল, কলেজ, মসজিদ নির্মাণে মানুষ কিভাবে নিজের সম্পদ ও অর্থকরী দান করে নির্মাণ করে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছু নেওয়ার আশা করেনি। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ, ভৈরবের হাজি হাসমত কলেজে, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ, চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, খুলনার ব্রজলাল কলেজ ইত্যাদি। ইদানিং অবশ্য এইরকম স্কুল কলেজ কেউ দান করে না। এখন মানুষ অনেক বুদ্ধিমান। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায়। যেই কাজ করলে দুনিয়া এবং আখিরাত দুটোই হয় সেই কাজ করে নতুবা কেবলই কেবল দুনিয়া হয় এমন কাজ। স্কুল কলেজ দান করলে কোনোটাই হয় না। স্কুল কলেজ যদি করতেই হয় সেটা করা হয় দুধেল গাইয়ের মত করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যা থেকে কেবল লাভই আসে।

আজ দেশে মানুষ আর বোকা না যে এমনি এমনি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবে। এখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হলো সবচেয়ে লাভবান ইন্ডাস্ট্রি। সেখানে একই সাথে সম্মান এবং লাভ দুটোই হয়। Something is seriously wrong in this country! এমনকি শিক্ষায়তনে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা হলো একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে যেই ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে তো অন্যান্য ক্ষেত্র কি বাদ যাবে? বড় বড় দুর্নীতিবাজ কারো কি আজ পর্যন্ত বিচার হয়েছে? দুর্নীতিবাজ যদি সরকারি দল ব্যতীত অন্য কোন দলের হয় তাহলে বিচার মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু সরকারি দল করে এমন কেউ দুর্নীতি করে এমন কারো কি বিচার হয়েছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানোর জন্য বিচার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারপর ডিপ ফ্রীজে। এইভাবেই দুর্নীতিকে আস্কারা দিতে দিতে দুর্নীতি এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন মানুষ মসজিদ, মাদ্রাসা, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল নির্মাণেও দুর্নীতি করে।

এইসব কু-কাজের সাথে কোন না কোনভাবে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই। এই জন্যই বলি একটি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টির মান যদি খারাপ হতে থাকে তার ফল জাতি হাতেনাতে পায়। সেই দেশের মানুষরা ভালো হতে পারে না। পৃথিবীতে এমন কোন উদাহরণ নাই যে একটি দেশে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশটি উন্নত হয়েছে।

লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়