শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০২১, ০২:২১ রাত
আপডেট : ১৩ জুন, ২০২১, ০২:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের পৈত্রিক ভিটা টুকুও হরিয়ে যাচ্ছে!

স্বপন দেব: [২] উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, নারী জাগরণের পথিকৃত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ। মৌলভীবাজারের রাজনগরে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি দখলে করে নিয়েছে এলাকার কুখ্যাত রাজাকার পরিবার। বাড়িটি উদ্ধার করে স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জেলাবাসীর।

[৩] লীলা নাগ ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এম.এ করার জন্যে ভর্তি হন। তার হাত ধরেই ঢাবিতে নারী শিক্ষার সূচনা। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংগ্রহশালায় লীলা নাগের ছবিসহ এই তথ্যটির উল্লেখ আছে। তবে শুধু এই একটি কারণেই নয়, লীলা নাগ পরিচিত তার ঘটনাবহুল সংগ্রামী জীবনের কারণে।

[৪] তিনি একাধারে ছিলেন একজন সাংবাদিক, জনহিতৈষী ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। লীলা নাগের পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। মা কুঞ্জলতা ছিলেন গৃহিনী। ১৯৩৯ সালে বিপ্লবী অনিল রায়কে বিয়ে করেন লীলা। বিয়ের পর তার নাম হয় লীলাবতী রায়।

[৫] লীলা নাগের পৈত্রিক বাড়ি রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটির পূর্বের কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই। বাড়িটির চারিদিকে সুনসান নীরবতা। এরমধ্যে প্রাচীনকালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে শতবর্ষী রেইনট্রি।

[৬] বাড়িটিতে থাকা প্রাচীন এবং দৃষ্টিনন্দন বাংলো আদলের ঘরটি আর নেই। নেই কোন স্থাপনা, চিহ্ন। অথচ এক/দেড় মাস আগেও প্রাচীন এ ঘরটি দাঁড়িয়ে ছিলো। সেই বাড়িটিতে বর্তমানে যিনি বাড়ি দখল করে আছেন সেই আব্দুল মুনিম চৌধুরীকে পাওয়া গেলো না, তার মা শামসুন্নাহার চৌধুরী আছেন বাড়িটিতে। তিনি মানবতা বিরোধী অপরাধী আলাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। তিনি জানালেন বাড়িটি ঝড়ে পড়ে গেছে, ভাঙা অংশগুলো সরিয়ে রেখেছেন তারা। তিনি জানান ৭০ বছর থেকে এ বাড়িতে তারা রয়েছেন, এ বাড়ি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে।

[৭] স্থানীয় সচেতন মহল লেখক-গবেষকরা জানান, মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলার অন্যতম আসামী, ১৯৭১ সালে পাঁচগাঁও গণহত্যায় জড়িত প্রয়াত আলাউদ্দিনের পরিবার বর্তমানে লীলা নাগের পৈত্রিক বাড়িটি ভোগ দখল করে আসছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই ২০১৮ সালে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গণহত্যার সাথে জড়িত চার ব্যক্তির এবং মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে। আলাউদ্দিন চৌধুরী রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে অপহরণ, বন্দী, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিলেন। এই অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আদালত। কিন্তু তার আগেই তিনি অক্টোবর ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার কারণে অভিযোগে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

[৮] সরকারি নথি থেকে জানা যায়, লীলা নাগের পৈত্রিক বাড়িতে মোট ভূমি ছিলো ৫.৯৭ একর। যার মধ্যে একটি পুরানো বাংলো এবং একটি পুকুর রয়েছে। পাশের কুঞ্জলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে লীলা নাগের মা কুঞ্জলতা নাগ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পাকিস্থান শাসনামলে তারা বাড়িতে থেকে চলে গেলে ১৯৬৭ সালে আসামের করিমগঞ্জ থেকে আলাউদ্দিন চৌধুরী এসে বাড়িটি দখলে নেন।

[৯] ১৯৬৭ সালে মহকুমা প্রশাসকের কাছে বাড়িটি লিজের জন্য ৫০/১৯৬৭ নং আবেদনে আলাউদ্দিন চৌধুরী ও আকমল আলী আবেদন করেন। কিন্তু আলাউদ্দিন চৌধুরী আকমল আলীর বিরুদ্ধে আপত্তি করেন। এর প্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালে আলাউদ্দিন মোট ১২টি এসএ দাগে ৪.৩৯ একর ভূমি লিজ পান। এর পরের বছর থেকে আলাউদ্দিন সরকারকে লিজ মানি পরিশোধ না করায় ইজারা বাতিল করে সরকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়।

[১০] ১৯৮৮ সালে আলাউদ্দিন আদালতে একটি স্বত্ত মামলা করেন (মামলা নং ১৪৫/১৯৮৮)। কিন্তু আদালত এটি খারিজ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি আপিল করেন। আপিল নং ১০৮/১৯৯০। সেটিও খারিজ হয়। তারপর ২০০০ সালে আলাউদ্দিন উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করেন যার নং ২৭২৫/২০০০।

[১১] পরবর্তীতে সরকার এই মামলার অবস্থা জানতে চাইলে আলাউদ্দিন ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি একটি তথ্যপত্র প্রদর্শন করেন। যেখানে দেখা যায় মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগে অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে জেলা প্রশাসনের ৮৯০ নং স্মারকে সরকারি কৌসুলী (জিপির) কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে এর তথ্যভিত্তিক কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

[১২] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ১১ জুন তাঁর ৫১তম মৃত্যু বার্ষিকী ছিলো। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ৫১ বছর পরেও সেই মহীয়সী নারী লীলা নাগের পৈত্রিক ভিটাটি উদ্ধার করে কোন স্মৃতি সংগ্রহশালায় বা অন্য কিছু তৈরি করতে না পারার দায় কি স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ও সচেতন জেলাবাসী এড়িয়ে যেতে পারেন?

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়