রাজিক হাসান : ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র যুগে আজ আমরা বাস করছি। পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা তাই এখন অকার্যকারী। চাই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু কেমন সে শিক্ষা ব্যবস্থা? শিক্ষাব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব ও মৌলিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ফিনল্যান্ড। বিশ্বে তারাই প্রথম এ যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করতে চলেছে। কী সেই পরিবর্তন?
৯০-এর দশকে সুইডেনে ‘টেমা’ সিস্টেম নামক শিক্ষা ব্যবস্থার আবির্ভাব হয়। পরবর্তী সময়ে ফিনিসীয়রা এটা লুফে নেয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থ্যায় যেকোনো একটা বিষয় নিয়ে সর্বাঙ্গীণ লেখাপড়া করতে হয়। সেটার উপরে থিসিস পেপার তৈরি করতে হয়। তারপর শ্রেণিকক্ষে সবার সামনে বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থ্যায় সিলেবাসের বইপত্র থাকে না। নিজেরাই প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে থিসিস বানিয়ে নিতে হয়। তাই অপ্রয়োজনীয় লেখাপড়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না।
শিক্ষকেরা কেবল কাজ করেন পরামর্শদাতা হিসেবে। ছাত্ররা যেখানে খুশি বসে স্কুলের কম্পিউটারের বিশেষ ফাইলে আপডেট করেন ও শিক্ষক সেদিকে খেয়াল রাখেন ও প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকটা প্রাচীন ভারতের টোল সিস্টেম এর মতোই। ফিনল্যান্ডের নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয়ভিত্তিক পাঠদান থাকছে না সেখানে। ছাত্র ছাত্রীর ১৬ বছর বয়সের পর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অংক এসব স্বতন্ত্র বিষয় (individual subject) কে বিদায় করে দেওয়া হবে নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থায়। দেশটির শিক্ষা বিভাগের পক্ষে বলা হচ্ছে যে প্রয়োজনে ১৯০০ সালের পর বিদ্যমান পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল আজ আর তার প্রয়োজন নেই। এখন নতুন যুগ, নতুন চাহিদা, নতুন পদ্ধতি। এখন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা নয়। পড়াশোনা হবে ‘ঘটনা ও পরিপ্রেক্ষিত’ অনুযায়ী। প্রথাগতভাবে ক্লাসে বসে ব্ল্যাকবোর্ড সামনে রেখে নয়। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়বে গ্রুপ গঠন করে। অনেকটা individual subject এর মতো।
যেমন ছাত্রদের একটা গ্রুপ ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ’ কে পড়তে চায়। তারা তখন ইতিহাস বই এর দ্বারস্থ হবে না। কীভাবে পড়বে তবে তারা? প্রথমে তারা পড়বে, মুক্তিযুদ্ধ- ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত। এখানে ছাত্রদের ‘ইতিহাস’ পড়া হয়ে যাবে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ- অর্থনৈতিক প্রক্ষাপট। ছাত্রদের এখানে ‘অর্থনীতি’ পড়া হয়ে যাবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। এই অংশ থেকে তারা পাঠ নেবে ‘সমাজ বিজ্ঞান’ এর। পরিশেষে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এখানে তাদের ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ পড়া হয়ে যাবে।
অর্থাৎ শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টা বিষয়ভিত্তিক অর্থাৎ ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদির হাত ধরে এগোবে না। এটা আবর্তিত হবে ঘটনা বা ইভেন্টের হাত ধরে। অভিনব সন্দেহ নেই। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা -নীরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সঠিক প্রয়োগের অপেক্ষা। এর খুঁটিনাটি জানা যায়নি এখনো। প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবেনা তাই। বরং পরিবর্তনের মর্মকথাটি বোঝার চেষ্টা করি আমরা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :