শিরোনাম
◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২১, ০১:৩০ দুপুর
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২১, ০২:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: বেগম রোকেয়ার দর্শন এবং নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা

দীপক চৌধুরী: কবি কুসুম কুমারীর বিখ্যাত কবিতা ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে - -’ কবিতাটি আমার ভীষণ পছন্দের। কারণ সময়ে সময়ে, পদে পদে, যুগে যুগে আমাদের একটা আফসোস্ আছে। তবে এটাও সত্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে অনেকেই এসেছেন ইতিহাসের ঘূর্ণনে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি একজন, তিনি কথায় নয় কাজে বড়ত্ব প্রমাণ করেছেন। কথায় নয়, কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করেছেন সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া আমাদের পথিকৃৎ। তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকার একটি রাষ্ট্রীয় পদক চালু করেছে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের ৯ তারিখ বেগম রোকেয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারি ভাবে এই পদক প্রদান করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘বেগম রোকেয়া পদক’ রাষ্ট্রীয়ভাবে করার ঘোষণা দেন ও এটি চালু হয়। এটি প্রবর্তনের ইতিহাস যদি দেখি তাতে একটি বিষয় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ লাগে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নারীজাগরণের কাজটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সবার সামনে আনেন। তিনিই রাষ্ট্রীয়ভাবে এই পদক দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করেন।

আমরা জানি, নারী কল্যাণ সংস্থা ১৯৯১ সাল থেকে এই নামের একটি পদক প্রদান করা শুরু করে। সরকারি ভাবে ১৯৯৬ সাল থেকে এই পদক প্রদান করা হয় শেখ হাসিনার নির্দেশে। পুরস্কৃত প্রত্যেককে এককালীন চার লক্ষ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের পঁচিশ প্রাম ওজনের একটি স্বর্ণ পদক এবং একটি সম্মাননাপত্র। শেখ হাসিনার সরকার আমলের শুরুতেই এদেশে প্রথম এই পদক পান নূরজাহান বেগম। এর আগে অনেকেই রাষ্ট্র দখল করেছেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক জান্তা, স্বৈরতন্ত্রের হোতারা দেশের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন কিন্তু একটিও গণমুখী কাজ তারা করেননি। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া তো একশ্রেণির মানুষের প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দিয়ে রাজনৈতিক দল কুখ্যাত ‘ফ্রিডম পার্টি’ গঠন করান আর খালেদা জিয়া স্বামী জিয়াউর রহমানের পথ ধরে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানান। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছে।

দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ আন্তরিক ছিলেন ও হৃদয় দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করতে জানেন বলেই আজ নারী ইউএনও, নারী ডিসি, পুলিশ- সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা, নারী সচিব এমন কী গুরুত্বপূর্ণ পদেও নারীরা মর্যাদার সঙ্গে কাজ করছেন। নারী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নারী আনসার কর্মকর্তা, নারী পুলিশ, নারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নারী নার্স তৃণমূলে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের মনে এখন এ বিশ্বাস কাজ করে যে, শেখ হাসিনাও একজন নারী। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি একটি দেশ চালাচ্ছেন। আর আমরা আমাদের দায়িত্বটি পালন করতে ভয় পাবো কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেন। তারমধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত তিনি নারীদের সচিব করেছেন। প্রশাসনে এখন ৮/৯ জন নারী সচিব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও সম্প্রচার, খাদ্য, কৃষি, জনপ্রশাসন, পাট ও বস্ত্র, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসহ সকল মন্ত্রণালয়েই অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব থেকে পরের পদগুলোয় রয়েছেন নারী কর্মকর্তা। পুরুষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

অনকেই এখন বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে এবং প্রশাসনে নারীদের সংখ্যাও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়- সবখানেই নারীরা আছেন যা এক সময় কল্পনা করা যেতো না। এর বাইরেও উল্লেযোগ্য সংখ্যক নারী নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছেন প্রশাসনে। বর্তমানে সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় সরকারে রয়েছেন ১০ জন নারী কর্মকর্তা, আর মাঠ পর্যায়ে ৬৪ জেলার মধ্যে ৯ জেলাই সামলাচ্ছেন নারী জেলা প্রশাসক।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, মোট সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ নারী, যা সাত বছর আগে ছিল ২১ শতাংশ। সাত বছরের ব্যবধানে এই হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। শীর্ষস্থানীয় ও নীতিনির্ধারণী পদে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এবং দিক নির্দেশনায় নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী সুযোগ পাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের উদ্যোগে গত মে মাসে সারা দেশের সর্বশেষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। ‘স্ট্যাটেসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ-২০১৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৭ জন নারী, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৭ শতাংশ। সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৫। ২০১০ সালে মোট চাকরিজীবীর মধ্যে নারী ছিলেন ২১ শতাংশ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রথম শ্রেণির মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৫ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ৩১ হাজার ৪৩২ জন। বর্তমানে মোট ৭৮ জন সচিবের মধ্যে দশজন নারী রয়েছেন। নারী সচিবের মধ্যে তিনজন তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। বাকিরা বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। তৃণমূল প্রশাসনে শতাধিক ইউএনও রয়েছেন।

সর্বশেষ গত ৪ মার্চের তথ্যানুযায়ী, সরকারের সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী কর্মকর্তা দশ জন, ৫১১ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৮৩ জন, ৬৩৬ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে ৮১ জন নারী কর্মকতা আর এক হাজার ৬৯৫ জন উপসচিবের মধ্যে ৩৪৯ জন নারী রয়েছেন।

নারীদের অগ্রসর করা-ই ছিলো বেগম রোকেয়ার চ্যালেঞ্জ। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম, চলতি বছরের বেগম রোকেয়া পদকের জন্য মনোনয়ন চেয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। নারীর শিক্ষা, অধিকার, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণ এবং পল্লি উন্নয়নে অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে এবারো পাঁচ জন বাংলাদেশী নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক, ২০২১ দেয়া হবে।

উল্লিখিত, যে কোন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন বাংলাদেশী মহিলাদের নিকট থেকে দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে। আদেনপত্রের ‘ছক’ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এ পাওয়া যাবে। ওয়েব-সাইটে প্রকাশিত ‘ছক’ ছাড়া অন্য কোন ছকে আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে তথ্য বিবরণীতে। পদক প্রাপ্তির ক্ষেত্র উল্লেখ করে আগামী ৩১ জুলাই এর মধ্যে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী ই- মেইলে (ই- মেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে) ডাকযোগে হার্ডকপি সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বরাবর পাঠাতে বলা হয়েছে।
বেগম রোকেয়া অনুধাবন করতে পেরেছিলেন প্রয়োজন নারীর মানসিক মুক্তির। অন্যের দয়ায় ওপর নারীর জীবন চলেছে বহুদিন। অবশ্য এখনো চলছে। নিজের পায়ে নারীদের দাঁড়ানো এবং নিজের চেষ্টায় পৃথিবীটা দেখা প্রয়োজন বোধ করেছিলেন তিনি। নারীরও যে একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে তা দুনিয়াবাসীর দেখা দরকার। এ জন্য এগিয়ে এলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ জন্ম, ডিসেম্বর ১৯৩২ মৃত্যু)। গুরুত্ব দিলেন নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির ওপর। তিনি প্রয়োজন অনুভব করলেন নারী শিক্ষার অগ্রগতি ছাড়া মেয়েদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হবে না।

আমাদের মেধা ও শ্রমের যুগপৎ সম্মিলনে আমরা আজকের এ অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন নিজেদের সভ্য ও আধুনিক মানুষ হিসেবে দাবি করি কিন্তু এখানে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক জটিল, কঠিন ও দুর্গম পথ। কে না জানে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন আমাদের এ সভ্যতা। তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ সভ্যতার পেছনে নানান গুনীজনের সদিচ্ছা ও সর্বাত্বক চেষ্টা ছিল।

এখন যতো রকম মায়াকান্নাই হোক না কেনো এতে কান দেওয়া ঠিক হবে না। আমাদের গুনীজনের যে চিন্তা ও আদর্শ তার বিপরীত অবস্থান জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ইসলামী দলের। ধর্মপ্রাণ মানুষকে কীভাবে যেন হেফাজত বিভ্রান্ত করে শেখ হাসিনার আধুনিক ও প্রগতিশীল সরকারের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাঁর সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক, দূরদর্শী ও সর্বত্যাগী বলেই আমরা হেফাজতি চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠিন, ইস্পাতের মতো ধারালো ও কৌশলী হতে জানেন শেখ হাসিনা।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়