শরীফ শাওন: [২] গবেষকরা জানান, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার সঙ্গে রয়েছে সুনীল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, জীবন ও জীবিকার লক্ষ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
[৩] মঙ্গলবার বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষ্যে ওয়েবিনারে বাংলাদেশের সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষকরা জানান, আলাদা মন্ত্রণালয় করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলো সাগর অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন ডলারের হাতছানি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
[৪] চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোসলেম উদ্দিন বলেন, উন্নত রাষ্ট্র এই খাতকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। বাজেটের একটি বড় অংশ সাগর অর্থনীতি থেকে সংগ্রহ করছে। সেখানে বাংলাদেশ এই সম্পদ আহরণের জন্য একটি স্বাধীন মন্ত্রণালয় গঠন করতে পারেনি গত ৯ বছরে। যা হতাশাজনক।
[৫] মোসলেম বলেন, সুনীল অর্থনীতির কথা ছোট্ট করে বলা হয়েছে। শুধুমাত্র মাছ আহরণের কথা বলা হচ্ছে সমুদ্র থেকে। কিন্তু ব্লু ইকনোমি যে কতবড় একটা বিষয়, সেটাই অনুধাবন করছে না কেউ। যে কারণে এটা নিয়ে আলাদা কোনো বাজেট নেই। মেরিন নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের জন্য কিছুই রাখা হয়নি বাজেটে। অথচ সমুদ্র নিয়ে গবেষণার জন্য আরু বেশি মনযোগ দরকার।
[৬] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শুধু সমুদ্রসীমা অর্জন নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। সমুদ্রকে কত উপায়ে আমরা কাজে লাগাতে পারি তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বিশেষ করে সাগরের ইকোসিস্টেম ঠিক রাখা এবং এখানকার সম্পদ আরোহণের বৈজ্ঞানিক ফর্মূলা উদঘাটন করতে হবে এবং সেটি সরকারের সামনে পেশ করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক করা গেলে সাগর অর্থনীতি থেকেই বছরে বিলিয়ন ডলার আয় করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন কোনো বিষয় নয়।’
[৭] তিনি বলেন, প্লাস্টিক সাগরের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, ‘বিকল্প প্রোডাক্ট না দিয়ে প্লাস্টিক বন্ধ করতে গেলে কাজ হবে না। একাধিক বিকল্প বাজারে থাকলে ধীরে ধীরে প্লাস্টিক এমনিতেই বিদায় নেবে। সুতরাং, প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করা এখন সময়ের দাবি।’
[৮] ওয়ার্ল্ড কনসারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিবছর পৃথিবীতে ১৫ কোটি টন প্লাস্টিক তৈরি হয় যা একবার মাত্র ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এর ৮৩ টন সাগরে এসে জমা হয়। প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রতিবছর ১০ কোটি সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে।’
[৯] চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত নাথ বলেন, ‘আমি স্যাটেলাইট টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করছি। ওশেন ডে’র তাৎপর্য এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমূদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। সমূদ্র বেশি উত্তাল হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে যখন বায়েলোজিক্যাল সীমা অতিক্রম করে, তখন ডিজাস্টার তৈরি হচ্ছে।’
[১০] ড. বিশ্বজিত নাথ বলেন, ‘সমুদ্রে যে অংশে সূর্যের আলো পৌঁছায় সেখানে বসবাস করে ৯০ ভাগ জলজ প্রাণী। কারণ, এই আলোকরশ্মির কারণে সালোক সংশ্লেষণ হয়। স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণ করে নাসার অ্যাকুয়া সেন্সর ব্যবহার করে যে সব তথ্য আমরা পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে সমুদ্রের ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌঁছেছিল। ২০২১ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, সূর্যের আলো পৌঁছায় মাত্র ৯৮ মিটার পর্যন্ত। এর কারণ হলো, সমুদ্রে অনেক দূষণ রয়েছে। সমুদ্রে আবর্জনা প্রচুর পরিমাণ থাকার কারণে আলো পৌঁছাতে পারছে না। আমরা নিজেরাই সমুদ্রের বায়োলজিক্যাল সাইকেল নষ্ট করে দিচ্ছি, যে কারণে আলো পৌঁছাচ্ছে না, জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।’
[১১] তিনি জানান, ‘ওশেন কার্বন সাইকেলে ব্যাপক পরিবর্তণ আসছে। এটা অ্যালার্মিং। আমাদের এখই পদক্ষেপ নিতে হবে। ল্যান্ড থেকে যেন কোনো বর্জ্য বা প্লাস্টিক সমুদ্রে যেতে না পারে, রিসাইক্লিং কিভাবে করতে হবে, সেটা ভাবতে হবে। ব্যাপক পরিমাণে বনায়ন করতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আশপাশের সব দেশ মিলেই এসব করতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :