শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ জুন, ২০২১, ০৪:২৬ সকাল
আপডেট : ০৮ জুন, ২০২১, ০৪:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তরুণ প্রজন্মের সর্বনাশ ডেকে আনছে মাদক-টিকটক

নিউজ ডেস্ক: মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটক (লাইকিসহ)-এই তিন সামাজিক ব্যাধিতে রীতিমতো বিপর্যস্ত নতুন প্রজন্ম। বিশেষ করে চলমান করোনায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে এসব অপকর্মে।

সম্প্রতি নতুন মাদক এলএসডি সেবনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা যান। এক নারীকে টিকটক হৃদয় ও তার সহযোগীদের গণধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয়। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাং সদস্যদের মাধ্যমে একাধিক খুনসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনার তদন্তে একে একে বেরিয়ে আসছে এই তিন অপকর্মের (মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটক) লোমহর্ষক নানা কাহিনি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অভিভাবকসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ।

সন্তানদের প্রতি সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা, নানা অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংগীতচর্চাসহ বিভিন্ন সুস্থ সংস্কৃতি ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে পড়াও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, উল্লিখিত তিন সামাজিক ব্যাধি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়াসহ সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এ ব্যাপারে এখনই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে সরকারকেই। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হয়েছে। মাদকে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। ভেজাল মাদক ইতঃপূর্বে কেড়ে নিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণের তাজা প্রাণ। গত জানুয়ারিতেই ভেজাল মদে ঢাকা, বগুড়াসহ সারা দেশে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয় ২০১৮ সালের ৪ মে। মাদক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত সরকারি সংস্থা ও বাহিনীগুলো এ অভিযান শুরু করে। বিশেষ অভিযানে এ পর্যন্ত ৬ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। কিন্তু বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। কমেনি মাদকসেবীদের সংখ্যা। মাদক এখন গ্রামে-গঞ্জেও ছেয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, যে মাদক ধরা পড়ে, সেটা খুবই সামান্য। বেশির ভাগই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইয়াবা এখন ঘরে ঘরে। মাদক ব্যবসায় জড়িত আছে ২০০ গডফাদার এবং বিক্রির ১ লাখ ৬৫ হাজার নেটওয়ার্ক।

টিকটক হচ্ছে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ। টিকটকের মতো লাইকি নামে আরও একটি অ্যাপ কমবয়সি বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই ভিডিওতে তারা নাচগানসহ বিভিন্ন কর্মকণ্ডের দৃশ্য এমনভাবে উপস্থাপন করে, যাতে উঠতি বয়সিরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। বিনোদনজগতের কোনো কোনো সেলিব্রেটিও এই দুটি অ্যাপে বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করেন।

টিকটক অ্যাপে আপলোডের ভিডিও তৈরি করতে অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। রীতিমতো তারা বেপরোয়া। টিকটক অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছর।

ভিডিও আপলোড করে টিকটকারদের ফলোয়ার বাহিনী তৈরি করা হয়। কথিত টিকটক স্টাররা এই ফলোয়ার বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। কিশোর ও তরুণী বয়সি টিকটকাররা উচ্ছৃঙ্খল পোশাক পরে, অস্বাভাবিক আচরণ করে। এলাকাভিত্তিক টিকটকের গ্যাংগুলো বিভিন্ন পার্ক, খোলা জায়গায়, ফুটপাত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একত্রিত হয়ে ‘ভিডিও কনটেন্ট’ তৈরি করার নামে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, যৌন হয়রানি, পথচারীদের গতিরোধ, বাইক মহড়াসহ নানা অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।

এই ফাঁদে পড়ে অনেকে কিশোর-কিশোরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝড়ে পড়ছে। অভিভাবকদের কথা শুনছেন না। আবার টিকটক করতে এসে অনেক কিশোরী-তরুণী ধর্ষণের শিকারও হয়েছেন। এমনকি টিকটকারদের ফাঁদে পড়ে পাচারের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। একটি টিকটকার গ্রুপ আন্তর্জাতিক মানব পাচারচক্রে যুক্ত হয়ে নারী পাচার করার প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে জোরালো অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সম্প্রতি ভারতে নির্যাতনের শিকার তরুণীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনা তদন্তে টিকটক মডেল বানানোর ফাঁদের ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। তদন্তে দেখা গেছে, এই ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার নারীকে ভারতে পাচার করা হয়েছে।

এছাড়া টিকটকারদের একটি ফেসবুক গ্রুপেরও তথ্য পাওয়া গেছে। এই গ্রুপটি চালাত আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। তারা গত বছর ঢাকার পাশের একটি জেলার রিসোর্টে ৮০০-৯০০ টিকটকারকে নিয়ে গেট টুগেদার পার্টিও করেছে।

আরও জানা যায়, টিকটকারদের বেপরোয়া তৎপরতার বিষয়টি ২০২০ সালের আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে রাস্তা দখল করে কথিত টিকটক স্টার ইয়াসিন আরাফাত অপুর নেতৃত্বে একদল কিশোর আড্ডা দিচ্ছিল।

এ সময় রাস্তায় একটি গাড়িকে সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে অপু ও তার গ্যাং বাহিনীর হাতে মারধরের শিকার হন কয়েকজন। এ নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হলে টিকটক অপুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। দাবি উঠে টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধ করার। তখন অ্যাপটি বন্ধও করা হয়েছিল। যদিও পরে সেটি ফের চালু হয়।

এছাড়া কিশোর গ্যাং একটি সংঘবব্ধ দল বা অপরাধচক্র। এর সদস্যদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ খুবই শক্তিশালী। মোবাইল ফোনসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় তারা। ব্যক্তি বা দলগতভাবে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়।

দেশে কিশোর গ্যাং সদস্যদের তৎপরতা অনেক আগে থেকে থাকলেও মূলত ২০১৭ সালে উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান হত্যাকাণ্ডের পর কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতা ও নির্মমতা জনসন্মুখে উন্মোচিত হয়। পরবর্তীকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত পদক্ষেপে তাদের তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আলোচনায় আসে এই গ্রুপ।

কিশোর গ্যাং সদস্যদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৭ বছর বা তদূর্ধ্ব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদেরও গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে কোনো কোনো গ্যাংয়ের সুনির্দিষ্ট নাম ও লোগো থাকে। গ্যাং সদস্যদের সেই নাম ও লোগো শরীরে ‘ট্যাটু’ করে স্থাপন এবং দেওয়াললিখনের প্রবণতা রয়েছে। গ্যাং সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে অধিপত্য ধরে রাখতে সব সময় সচেষ্ট থাকে। তারা মনে করে নিজ এলাকায় তাদের অগোচরে কোনো কিছু ঘটবে না।

এক্ষেত্রে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকে। তারা নিজেদের গ্যাং সংগঠনের প্রচারণা চালাতে পছন্দ করে। গ্যাং সংগঠন নিয়ে গর্ববোধ করে। এমনকি কোনো সময় সদস্যরা একই রকমের জামাকাপড় পরার স্টাইল অনুসরণ করে।

কেউ কেউ অথবা সবাই জুয়েলারি ও অলংকার পরিধান করে। সদস্যদের ভেতর অস্ত্র বহনের প্রবণতা থাকে। তারা ছুরি ও পিস্তল বেশি ব্যবহার করে। এছাড়া অধিপত্য বিস্তারের জন্য রামদা, হকিস্টিক, বন্দুকসহ নানা অস্ত্র জড়ো করে রাখে। গ্যাং সদস্যরা রিক্রুটিংয়ের মাধ্যমে দলের সদস্য বাড়ায়। দুর্বলচিত্তদের সহজেই গ্যাং দলে অন্তর্ভুক্ত করে।

গত কয়েক বছরে কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে যে কয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেসবের মধ্যে চারটি ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এগুলো হলো : উত্তরায় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি স্কুলছাত্র আদনান, উত্তরখানে ২০১৯ সালের ২১ মার্চ স্কুলছাত্র হৃদয়, টঙ্গীতে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই স্কুলছাত্র শুভ এবং একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে কিশোর নুর হত্যা। এসব ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া হলেও একটিতেও বিচারকাজ শেষ হয়নি।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে কিশোর গ্যাং সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা। গ্রেফতারের পর গ্যাং সদস্যদের জামিনের ব্যবস্থা করছে গডফাদাররাই। ১৬ মে মিরপুরের পল্লবীতে সুমন বাহিনীর প্রধান সুমনের নেতৃত্বে সাহিনুদ্দিন নামে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশুসন্তানের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কোপানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সুমন বাহিনীর গডফাদার সাবেক এমপি এমএ আউয়ালকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি গ্যাং রয়েছে। আছে গডফাদারও। মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেক এলাকার একটি গ্যাংয়ের গডফাদার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হাফিজুল ইসলাম বাবু। এই গ্যাংয়ের রয়েছে একটি শুটার গ্রুপ।

শুটার গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে আছে হালিম, সাব্বির দেওয়ান, বোমা সিরাজ, দাউদ কামাল ও ডালিম। এই গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে পল্লবী, মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেক থানায় ২৮টি মামলা রয়েছে। ভাসানটেকের অন্তত ১০টি মাদকের স্পট এ গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, দেশে আইনের শাসন না থাকা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা সীমাবদ্ধতা, স্কুল-কলেজ বন্ধ, করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়া, সামাজিক অবক্ষয় বা সমাজব্যবস্থার ত্রুটি, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব, দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা বা মানসম্মত শিক্ষার অভাব, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকা, দুষ্ট সহচার্য এবং ব্যক্তিত্ববোধের অভাবসহ নানা কারণে তিন ব্যাধি সমাজে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সামনে এগুলো আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, স্কুল কর্তৃপক্ষ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। খেলার মাঠ, ক্লাবসহ পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। সন্তানকে বিভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলির শিক্ষা দিতে হবে।

সময় দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে কি না, স্কুল ও এর আশপাশে মাদকসেবন হয় কি না, র‌্যাগিং হয় কি না ইত্যাদি বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে। মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, টিকটকার, কিশোর ও কিশোর গ্যাং সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে।

গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক ও নিয়ন্ত্রকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যে কোনো ধরনের অপরাধ বড় আকার ধারণ করার আগেই সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘসময় বন্ধ থাকার কারণেই এসব অপরাধপ্রবণতা আরও বেড়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সব অপরাধের মূলে মাদক। মাদককে কেন্দ্র করেই কিশোর গ্যাং এবং টিকটক-লাইকি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, একশ্রেণির লোক সব ধরনের অপরাধে জড়িত। আমরা এদের তালিকা তৈরি করতে এরই মধ্যে সব ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দিয়েছি।

তালিকা প্রস্তুত হলে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৪০০ সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে র‌্যাব। ২০১৯ সালেই ২৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জনকে অর্থদণ্ড এবং ১০ জনকে মুচলেকার বিনিময়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৯ সালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকসেবন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৪৪ জন কিশোর অপরাধীকে গ্রেফতারের পর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

র‌্যাব পরিচালক জানান, গত দুই বছরে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১০৯ জন, দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ১৩ জন, চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫৭ জন এবং চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে ছয়টি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ রোববার রাতে উত্তরা ও টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে ‘কিশোর গ্যাং ডি কোম্পনি’র পৃষ্ঠপোষক বাপ্পি ও নীরবসহ ১২ জনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়