নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে জাপানের বিশেষ প্রজাতির আম। জাপানের মিয়াজাকিতে উত্পন্ন হওয়ার কারণে এটি মিয়াজাকি আম নামে পরিচিত। তবে অনেকে একে সান এগ বা সূর্যডিম আমও বলেন। নতুন জাতের এ আম দেখতে কিছুটা অন্য রকম। লালচে এ ফলটির স্বাদ-ঘ্রাণ দুটোই আমাদের পরিচিত আমের চেয়ে ভিন্ন। বাংলাদেশের পাহাড়ের আবহাওয়া সুস্বাদু মিয়াজাকি আম চাষের জন্য উপযোগী। তাই পাহাড়ে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালে জাপান থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে পাঁচটি মিয়াজাকি আমের চারা কলম সংগ্রহ করেন মংসেতু চৌধুরী নামে খাগড়াছড়ির এক তরুণ বাগানি। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে একটি চারা কলমের গাছ। ২০১৮ সালে সে গাছটিতে ১৫ কেজির মতো আম ধরে। সে সময় কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা করে পাঁচ কেজি আম বিক্রি করেন মংসেতু।
জেলা সদরের কমলছড়ি এলাকার মং গ্রিন লাইফ এগ্রো ফার্মের মালিক মংসেতু জানান, তার বাগানে বর্তমানে ৫০টি মিয়াজাকি আমের গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে এ পর্যন্ত ৩০০ কেজি আম বিক্রি করেছেন তিনি। কেজিপ্রতি দাম ধরেছেন ৩০০-৪০০ টাকা। আরো ১০০ কেজির বেশি আম গাছে রয়েছে।
মংসেতু আরো জানান, তার বাগানে উৎপাদিত আমগুলোর দু-তিনটিতেই এক কেজি ওজন হয়। আম চাষের পাশাপাশি চারাও তৈরি করছেন তিনি। প্রতিটি চারা কলম ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন মংসেতু। তিনি জানান, এ জাতের আমকে গাছেই পাকতে দিতে হয়। চার-পাঁচদিন গাছে রেখে তারপর ঘরেও রাখতে হয় দু-তিনদিন। এর পরই এ আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ ভালো পাওয়া যায়।
মংসেতুর পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের আম চাষ করেছেন হ্লাশিমং চৌধুরী নামে এক কৃষক। প্রথমবারের মতো চাষেই নিজেকে সফল বলে দাবি করেন তিনি। জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় পাহাড়ের ঢালুতে ৬০ শতক বাগানে অন্যান্য আমের জাতের সঙ্গে মিয়াজাকি প্রজাতির আম চাষ করেছেন তিনি। পুরো বাগানে ১২০টি মিয়াজাকি আমের গাছ রয়েছে। সবগুলোতেই ফলন হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো জাপানি জাতের আমের ফলন তুলেছেন এ বাগানি।
হ্লাশিমং চৌধুরীর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালের গাছে ঝুলছে রঙিন আম। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কিছু কিছু গাছে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি।
ভিন্ন এ জাতের আমের চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নতার কারণে অনেক গ্রাহকই অফলাইন বা অনলাইনে যোগাযোগ করে সরাসরি বাগান থেকেই আম কিনে নিয়ে যান। জাপানে ৭০০ গ্রামের এক জোড়া আমের দাম ২ লাখ টাকার বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা কেজিতে এবার আম বিক্রি করেছেন তিনি। গত বছর দাম ছিল ৮০০ টাকা কেজি।
২০১৭ সালে ভারতের পুনে থেকে মিয়াজাকি আমের মাতৃ চারা সংগ্রহ করেছিলেন হ্লাশিমং চৌধুরী। এরপর তার বাগানে কলমের মাধ্যমে ১২০টি চারা করেন। ২০১৯ সাল থেকে মিয়াজাকি বাগানে ফলন আসতে থাকে। ২০২০ সাল থেকে বাণিজ্যিভাবে আম বিক্রি শুরু করেন তিনি। তবে এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তার পরও উপযুক্ত দাম পেয়ে খুশি তিনি। এবার এক টনের মতো ফলন পাবেন এবং তা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা তার। উচ্চমূল্যের এ ফলের চারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। এজন্য মাতৃ চারা কলমের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, বিদেশী জাতের এ আম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হওয়ায় দেশের বাইরে রফতানিও করার সুযোগ আছে। ঠিকমতো পরিচর্যা করে ফলন ফলাতে পারলে স্থানীয়ভাবে বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যাবে। এতে চাষীরাও লাভবান হবেন। তাই হর্টিকালচারের মাধ্যমে মাতৃ চারা সৃষ্টি করে চাষীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
যেহেতু দেশের আবহাওয়ায় এ জাতের আম চাষ হচ্ছে, তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার প্রতি জোর দিলেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুন্সী রাশীদ আহম্মেদ। তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষকরা এ আম চাষ করলে ভালো করতে পারবেন। - বনিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :