নিউজ ডেস্ক : ব্যবসা না থাকায় দুই মাস ধরে বন্ধ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশের একটি নামি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তাদের চাপে দিশেহারা প্রতিষ্ঠানের মালিক। ‘ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি’—বলেও রেহাই পাচ্ছেন না তিনি। তার প্রশ্ন, ‘সরকারের কোনো সহযোগিতা, প্রণোদনা তো পেলামই না। আমি এখন কী করব? ব্যবসা নেই, কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। এ পরিস্থিতিতেও আমাদের মুক্তি নেই।’ ইত্তেফাক
করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পর্যটন খাতও বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বিমান পরিবহন, হোটেল-রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন— পর্যটনের সঙ্গে জড়িত অনেকের কর্মসংস্থান পড়েছে হুমকির মুখে। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও তা নিছক ঘোষণাতেই আটকে রয়েছে। সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটেও এই খাতকে জাগিয়ে তুলতে কোনো দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি। ফলে দেশের পর্যটন খাত চরম বিপদের সম্মুখীন। ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন ট্যুর অপারেটররা।
করোনার প্রভাব কবে কমবে তা কেউ বলতে পারছে না। পর্যটন শিল্পকে টিকে থাকতে হলে সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, বাজেটে পর্যটন খাতে বরাদ্দের সুযোগ নেই। তবে, তাদের প্রণোদনার বিষয়ে কথা হচ্ছে। দেখা যাক কী করা যায়।
প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস প্রসঙ্গে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এই আশ্বাস গত এক বছর ধরে শুনছি। তার কোনো প্রতিফলন এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এদিকে, অর্থ ও ব্যবসা সংকটে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের বাংলাদেশ মুখপাত্র ও এফবিসিসিআই ট্যুরিজম-বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মো. তাসলিম আমিন শোভন বলেন, পর্যটন খাতে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। কিন্তু তারাই প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। শুধু যদি গত ২০ বছরের বৈদেশিক মুদ্রা কোন প্রতিষ্ঠান কতটা অর্জন করেছে সে হিসাবও সরকার করে, তার ২০ শতাংশ ঋণ দিলেও আমরা ঝুঁকি সামাল দিতে পারতাম। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায়?
জানা গেছে, যেসব ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সরাসরি পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত তারাই এখন পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা পায়নি। অথচ, বর্তমানে দেশের মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রণোদনা প্রাপ্তির বিষয়ে পর্যটন বোর্ড, বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে বারবার বলেও সুরাহা হয়নি। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ ও তিন বছরের জন্য হলেও কর ছাড় দিতে হবে। কারণ, গত দেড় বছরে যে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী এক থেকে দুই বছরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি গত দেড় বছরের ব্যাংক ঋণও মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তারা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ খাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ জনবল বেকার হয়ে পড়েছে। গত দেড় বছরের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে অনেক ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এখনো টিকে রয়েছে তারাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকটে রয়েছে। দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম নাসিম জানান, পর্যটন খাতকে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ তা পায়নি। এদিকে, প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাভোগী হচ্ছে হোটেলগুলো। কিন্তু যে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে তারা এই সুবিধা বলয়ের বাইরে থাকছে। ফলে, পর্যটন ব্যবসার মূলশক্তি যারা তারাই বিপদে প্রণোদনা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :