বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে নানা ক্যাটাগরির কোম্পানির ক্ষেত্রে নানা রকমের করের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কর কর্মকর্তাদের মতে কোম্পানি করের এই রকমফেরে দক্ষিণ এশিয়ায় রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ।
[৩] সাবেক রাজস্ব বোর্ড সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভারতে কোম্পানি কর ২ রকমের। একটি হলো বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানির কর, অন্যটি দেশি কোম্পানির কর হার। পাকিস্তানে ৪ রকমের, এগুলো হলো; ব্যাংক কোম্পানি, পাবলিক কোম্পানি, অন্যান্য কোম্পানি ও ক্ষুদ্র কোম্পানি। নেপাল ও শ্রীলংকাতেও কোম্পানি কর মোটামুটি ২ থেকে ৩ স্তরের। শুধু বাংলাদেশেই কোম্পানি করের হরেক রকম ভাগও ও বিভিন্ন রকমের হার। এই বিবেচনায় এটি একটি রেকর্ড বলা যেতে পারে।
[৪] উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০২১-২২ সালের বাজেটে ১৬ ধরনের কোম্পানি ও তাদের নানা ধরনের করহার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ১৬টি নানা প্রকৃতির কোম্পানির মধ্যে ৪ ধরনের কোম্পানির কর হার ২ থেকে আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। ৩ ধরনের কোম্পানির করহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর ৯ ধরনের কোম্পানির কর হার স্থিতাবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ আগের মতোই আছে।
[৫] কর কমানো হয়েছে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির, তাদের করহার আগের ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিক নয় এমন কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে একক ব্যক্তি কোম্পানির করহার। এই ধরনের কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ থেকে কমিয়ে একেবারে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ট্রাস্ট বা এই ধরনের কোম্পানির কর হার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
[৬] কর বৃদ্ধি পেয়েছে মোবালই ফোনে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের। তাদের সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। আবার পাবলিকলি ট্রেটেড নয় এমন মোবাইল ফিনান্সিয়াল কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি বৃদ্ধি করে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তার করহার ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি প্রযুক্তি কলেজ সমূহকে ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে।
[৭] এর বাইরে অপরিবর্তিত কর রয়েছে নানা ধরনের কোম্পানির, সেগুলো হলো; গার্মেন্ট কোম্পানি, গ্রীন গার্মেন্ট কোম্পানি, সিগারেট, বিড়ি, তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, পাবলিকলি ট্রেটেড মোবাইল ও নন ট্রেটেড মোবাইল কোম্পানি, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানি।
[৮] কোম্পানিভেদে বিভিন্ন করের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। আবার যারা কোম্পানির মালিক তারা অনেকই প্রভাবশালী। বাজেটে কররোপে তাদের অখুশী করা যায় না। তাই নানা ক্যাটগরি বের করে, নানা ভাবে কিছু কর ছাড় দেয়া হয়। আবার কিছু বৃদ্ধি করা হয়। এটা স্বাভাবিক কর প্রক্রিয়ার অংশ নয়। এটি একটি কৌশল। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কর প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার একটি কর্পোরেট কর কাঠামো রয়েছে। এতে কর হার ৩০ শতাংশ। কিন্তু এই ক্যাটাগরিতে কখনো কোন কোম্পানি কর দেয়নি। শুধুমাত্র অন্যকোন ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না এমন কোম্পানিগুলোকে এখানে এনে করারোপ করা হয়। সম্পাদনা: মেহেদী হাসান