ইমরুল শাহেদ: তখন সবেমাত্র আনন্দ বিচিত্রার ঈদ সংখ্যার প্রস্তুতি চলছে। সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে আমার ওপর দয়িত্ব পড়লো পরিচালক আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে একটি উপন্যাস লিখিয়ে নিতে হবে। আমজাদ হোসেনকে বলতেই তিনি বললেন, আমার কাছ থেকে উপন্যাস নিতে হলে তোমাকে আমার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তাই করলাম আমি। তার স্ত্রী সুরাইয়া আখতার চৌধুরীর শরণাপন্ন হয়ে বিষয়টা বলতেই তিনি বললেন, ‘আমজাদ উপন্যাস দিবে। তোমার হয়ে আমিই লেগে থাকব।’ তখন সোহেল চৌধুরী ও দিতিকে নিয়ে তিনি ‘হীরামতি’ ছবিটি মুক্তি দিয়েছেন।
এ ছবি করার সময়ই সোহেল-দিতি বিয়ে করেন। ছবিটি নিয়ে প্রতিবেদন লেখার জন্য আমি এক সপ্তাহ এই ছবিটির সিলেটের আউটডোর লোকেশনে ছিলাম। সোহেল-দিতির বিয়ের বিষয়টি সেখানে গিয়েই জানতে পারি। অবশ্য যাওয়ার পথে আমজাদ ভাই আমাকে বলেছিলেন, ‘চলো - চমক আছে।’ সেই চমক যে সোহেল-দিতির বিয়ে লোকেশনে গিয়ে সেটা বুঝতে আর বাকি থাকলো না। যাহোক, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর আমজাদ ভাই আমাকে ‘উপন্যাস পেতে হলে তোমাকে আমাদের সঙ্গে যশোহরের মনিহার সিনেমা হলে যেতে হবে’ বলে শর্ত দিলেন। আমি এক কথায় রাজী হয়ে গেলাম। ব্যবস্থা করেছেন হল মালিক সিরাজুল ইসলাম। সঙ্গে থাকবেন রাজীব, সোহেল ও দিতি। যশোহরতো গেলাম।
শোও ছিল বেশ জমজমাট। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল ফেরার পথে। রাজীব, সোহেল, দিতি ও আমাকে যে গাড়িটি দেওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িটি ফরিদপুরের এক নির্জন স্থানে এসে নষ্ট হয়ে যায়। রাজীব চেষ্টা শুরু করেন ট্রাক ধরে ঢাকা ফেরার জন্য। কারণ সেই সময়ে এতো রাতে যাত্রীবাহী বাস পাওয়া ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু ট্রাকই নিতে আমাদের নিতে রাজী হলো না। হতাশ হয়ে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। হঠাৎ একটা বাস আসায় আমরা হতাশা কাটিয়ে উঠলাম। বাসে উঠলাম ঠাসাঠাসি করে। দিতি কোনো রকমে বসলেন। আমরা দাঁড়িয়েই থাকলাম। আমি ছাড়া তাদের তিনজনেরই মুখ ছিল ডাকা। সুতরাং বাসে কোনো সমস্যা হলো না। তার দুই দিন পর আমজাদ ভাই আমাকে উপন্যাসটি দিলেন। নাম রাখা হলো ‘কৃষ্ণলীলা’। আনন্দ বিচিত্রায় মুদ্রিত এই উপন্যাসটি যখন বই আকারে প্রকাশ হয়, তখন সেটি তিনি আমাকে উৎসর্গ করেন।