কালের কণ্ঠ : রাজশাহীর বাজারে গত বছরের এই সময়ে কোনো আমের দামই প্রতি মণ এক হাজার টাকার নিচে ছিল না। অথচ চলতি বছরে সেই চিত্র অনুপস্থিত। গতকাল রবিবারও এখানে লখনা ও গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দরে। আর গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে। অথচ গত বছর প্রতি মণ গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার টাকায়। রাজশাহীতে গোপালভোগ জাতের আম প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর জাতের আমের আধিক্য। কিন্তু সেই ক্ষীরশাপাতিতেও তেমন বাজার পাচ্ছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এতে কিছুটা হলেও হতাশা বিরাজ করছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে রাজশাহীর বাজারে আমের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন চাষিরা। এ ছাড়া বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় এবার আমের উৎপাদনও তুলনামূলক ভালো হয়েছে। ফলে খরার পর গাছে যে পরিমাণ আম টিকে গেছে, সেগুলোই পোক্ত হয়েছে। চাষিরা সেই আম এখন বাজারজাত করছেন।
গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে পোক্ত আমও ব্যাপক হারে ঝরে পড়েছিল। এমনকি গাছে টিকে যাওয়া আমগুলোও অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গোপালভোগ আমের ফলন। কারণ গোপালভোগ আম পোক্ত হওয়ার সময়টাতেই আম্ফান আঘাত হানে। এবার তেমন কোনো দুর্যোগ রাজশাহীর আমের ফলনে আঘাত করেনি।
রাজশাহীর বৃহত্তর আম বাজার পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লখনা ও গুটি জাতের আম প্রতি মণ (৪৬ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দরে। অন্যদিকে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা দরে। একেবারে শেষ হতে যাওয়া গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে।
বাজারে আম কিনতে আসা ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ী জুলহাস বললেন, ‘এবার আমের দাম কিছুটা কম। অন্যান্যবার আচার বা জুস কম্পানিও প্রচুর গুটি ও লখনা জাতের আম কিনত। কিন্তু এবার তারাও তেমন আম কিনছে না। ফলে এসব জাতের আমের দাম অনেক কম। আর করোনার ভয়ে বাজারে তেমন ক্রেতা আসছে না। ফলে অন্যান্য জাতের আমেরও দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় এই সময়ে অনেকটা কম।’
বাজারে আম বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুরের চাষি মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘১০ মণ আম গাছ থেকে পাড়তে অন্তত চারজন শ্রমিক লাগছে। তাদের দিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা। এরপর রয়েছে গাড়িভাড়া, হাটের খাজনা (টোল)। এতে আরো খরচ হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। অথচ ১০ মণ লখনা বা গুটি জাতের আম বিক্রি করে দাম পাওয়া যাচ্ছে ছয়-সাত হাজার টাকা। ফলে এসব জাতের আম চাষ করে এবার তেমন লাভ হবে না, যদিও ক্ষীরশাপাতি ও গোপালভোগ জাতের আমের দাম কিছুটা ভালো আছে। কিন্তু এসব জাতের আম গাছে কম ধরে। ফলে গড়ে গুটি বা লখনা জাতের আমের মতোই দাম পাওয়া যাচ্ছে এ বছর।’
রাজশাহীতে এবার আম চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ টন। তবে এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন আম চাষি ও বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :