শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৬ জুন, ২০২১, ০৫:৪৭ বিকাল
আপডেট : ০৬ জুন, ২০২১, ০৫:৪৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মঞ্জুরে খোদা টরিক: গরীবের ডাক্তার ও অসহায়ের আশ্রয়, ডা: আবু সাঈদ এর জন্মদিনে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা

মঞ্জুরে খোদা টরিক: আগে তাঁর পরিচয়টা একটু দিয়ে নেই। অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ এমবিবিএস, ডিসিএম, এমডি, পিএইচডি (বারডেম)। তিনি একজন শিক্ষক, গবেষক, জনস্বাস্থ্য ও মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের একজন মৌলিক গবেষক। ডায়বেটিসসহ অন্যান্য নন কমিউনিকেবল ডিজিসের উপর তার গবেষণাসমুহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে স্বীকৃত ও সমাদৃত। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বখ্যাত ল্যানসেড, ইউরোপিয়ান জার্ণাল অব প্রিভেনটিভ কার্ডিওলোজি, ডায়বেটিক মেডিসিনসহ বিভিন্ন নামকরা জার্ণালের গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল রিভিউয়ার।
এবার মূল গল্পে আসি-

ক’বছর আগে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছি। গিয়ে প্রথমে আমার বোনের বাসায় উঠি। পরদিন সুরভিদের কমলাপুরের বাসায় যাই। কিন্তু বাসায় ওর বাবা নেই। তিনি গেছেন পাবনায়। সেখানে গরীব কৃষক, দিনমজুর ও অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে এতদিন পরে ছেলেকে নিয়ে দেশে গেছেন- আর বাবা কিনা গ্রামে গিয়ে পরে আছেন! সুরভি হাসিমাখা অভিমানে মা’কে বলছে, আমি এতদিন পরে ছেলেকে নিয়ে দেশে এসেছি, আর বাবা আমাকে গুরুত্ব দিলো না..? দেখছি তার কিছুটা ক্ষোভ-অভিমান। বাবা পরেও তো যেতে পারবে পাবনায়- আমি দেশ থেকে চলে গেলে। যাইহোক, তিনি আমাকে বললেন, তার আসতে দুইতিন দিন লাগবে, তুমি বরং সুরভি, সাঁকোকে নিয়ে পাবনায় চলে এসো। আমার বাড়ী সিরাজগঞ্জ আর উনাদের গ্রামের বাড়ী পাবনা সাথিয়া। মানে আমাদের পাশেই। অতপর আমি ওদের নিয়ে সিরাজগঞ্জ যাই। সেখানে নিজ বাড়ীতে যেয়ে ছোটভায়ের গাড়ী নিয়ে সুরভিদের গ্রামের বাড়ীতে যাই। সিরাজগঞ্জ থেকে সাথিয়া'র দূরত্ব খুব বেশী নয়। ভালই হলো- আমার গ্রামও দেখা হলো সুরভির বাবার সাথে দেখা হলো।

পাবনায় যেয়ে দেখি শ্বশুর মশাই গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত অতি অভাবী গরীর মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সেখানে চেম্বার বলতে একটি খোলা পুরনো টিনের ঘর। রুগীরা কেউ সেখানে মাটির মেঝেতে, কেউ বেঞ্চে, কেউ টুলে, কেউ চেয়ারে বসে আছেন। তাকে ঘিরে আছেন বয়স্ক রুগীরা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা অতিগরীব, অসহায়, যাদের প্রায় সবারই ওষুধ কেনার, ডায়গোনিসিস করারও পয়সা নেই। পয়সা নেই বলে কি চিকিৎসা হবে না, ডাক্তার সাহেব আছেন না? তিনি শুধু তাদের কাছে একজন ডাক্তারই না, তাদের আশ্রয় ও ভরসাও। ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ তিনি নিয়ে গেছেন, যে ওষুধ নেই তারজন্য টাকা দিচ্ছেন ওষুধ কিনতে। এভাবেই তিনি মানুষের সেবা করেন, তার কাছে এটাই চিকিৎসা সেবা। চাকরি ও চিকিৎসা থেকে যা উপার্জন করেন তার বড় অংশই এই মানুষটি খরচ করেন তাদের পিছনে।

আমি উনাকে বললাম, আচ্ছা আপনি ওদের চিকিৎসা করেন ভাল কথা, কিন্তু আপনি আপনার গ্রামের চেম্বারটাও তো একটু ভাল করে গুছিয়ে নিতে পারেন। সুন্দর করে সাজাতে পাবেন, দেখতেও ভাল লাগবে। তিনি বললেন, দেখ টরিক, আমি সেটা করতে পারি কিন্তু সেটা আমি করবো না। কারণ আমি যদি আমার চেম্বারকে তেমন করে সাজাই তাহলে গ্রামের অসহায় গরীব মানুষরা আমার কাছে, আমার চেম্বারে আসতে ভয় পাবে, অস্বস্তিবোধ করবে। তারা আমাকে কমার্শিয়াল ভাববে। আমার সাথে দূরত্ব তৈরী হবে। আমি সেটা চাই না। তাদের সাথে আমার মাটির সম্পর্ক থাক, মাটিতে বসার সম্পর্কই থাক। এ কথা শোনার পর আমার মাথা সেদিন তার প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে এসেছিল। এমনও মানুষ এখনো জগতে আছে?

তার জীবন-যাপন খুব সাধারণ। ছেড়া জামা-জুতা, টায়ারের স্যান্ডেল পরে অবলীলায় তিনি ঘুরে বেড়ান সেমিনার সিম্বোজিয়ামে। পায়ে হেঁটে, বাসে, ট্রেনে, রিক্সা, বাইকে চলাফেরা করেন, অফিস যান। ঢাকায় তার নিজ বাড়ীতেও তেমন কোন জৌলুষ নেই, কোন চাকচিক্য নেই। পুরনো আমলের কিছু আসবাব পত্র এই যা। অথচ তার কি সুযোগ ছিল না জীবনে? বিদেশের জীবন, দামী চাকরি সবই তিনি পায়ে ঠেলেছেন। যারা উনাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তারা জানেন তিনি কি চরিত্র, ধরণ ও পর্যায়ের মানুষ। উনার স্ত্রী মানে আমার শ্বাশুরী ডা: আখতার বানুও (পিএইচডি) একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক, গবেষক ও শিশুপুষ্টি বিশেষজ্ঞ।
ড. আবু সাঈদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (WHO) দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামিদামী সংস্থায় দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। তাদের স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণানীতি-পরিকল্পনার সাথে নিজের চিন্তা-আদর্শের গড়মিল হবার কারণে কোথাও তিনি বেশীদিন থাকেননি। চাকরি ও প্রকল্প ছেড়ে চলে এসেছেন। প্রচলিত খ্যাতি-সম্মানকে তিনি পরোয়া করেন না। তিনি চলেন তার ভাবনা-রুচী ও বুদ্ধিতে। তাঁর মন-মানসিকতা, রুচী-সংস্কৃতি, জীবন-যাপন ও চিন্তাপদ্ধতির কারণে অনেকই তাঁকে সেকেলে বা প্রাচীনপন্থী বলে মনে করেন। তা যে যাই বলুক তবে- মানুষ হিসেবে তিনি অসম্ভব আধুনিক, মানবিক, প্রগতিবাদী ও উদার। তিনি সমাজতন্ত্র ও সমাজপরিবর্তনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করা- একজন খেলাঘরিয়ান ও সুদর্শন পুরুষ।

আজকাল আমরা সমাজে যে ডাক্তারের যে চিত্র দেখি তিনি সম্পুন্ন তার বিপরীত। একজন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন স্পেশালিস্ট হিসেবে তিনি তার জীবনে কোন ধরণের কমিশন ও অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন না। শুধু তাই নয়, এ সবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে কয়জন হাতেগোনা ডাক্তার সোচ্চার’ তিনি তাদের অন্যতম প্রধান একজন। তারজন্য জীবনে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক বড় বড় সুযোগ-সুবিধা সচেতনভাবেই প্রত্যাখান করেছেন। তিনি হচ্ছেন এই বৈরী সময়ে- স্রোতের বিপরীতে চলা এক উজান মানুষ।

আজ এই ভদ্রলোক, আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর গরীবের ডাক্তার ও অসহায়ের আশ্রয়, ডা: আবু সাঈদ এর জন্মদিনে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। লেখকের ফেইসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহিত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়