শহিদুল ইসলাম: [২] সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানীর পথে এগোচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে সরকারে ১৫ টি মেগাপ্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নে বদলে যাবে বন্দরনগরীর সার্বিক চিত্র। প্রকল্পগুলো পুরোদমে চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চট্টগ্রাম তথা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়। এখানে কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে বর্তমান সরকারের প্রস্তাবায়িত ও চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে ৫/৬টি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটির কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
[৩] মেগাপ্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্প, মিরসরাই ইকোনমিক জোন প্রকল্প, সোনাদিয়ায় দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত গভীর সমুদ্রবন্দর (ডিপ সী-পোর্ট) নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও স¤প্রসারণের পাশাপাশি পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র মোহনায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্প, মহেশখালীতে ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, নগরীর ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক, নদীতীর সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, নগরীতে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ ও ভান্ডারজুরি পানি সরবরাহ প্রকল্প, আনোয়ারার গহিরা এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রকল্প, আউটার রিং রোড প্রকল্প, সীতাকুন্ডে বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া সরকারের এসব প্রকল্পের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে এ বছরই বাঁশখালীতে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও চীনের শেনডম ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন (সেপকো)।
[৪] এদিকে সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা চট্টগ্রামের ৩ মেগা প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ পাচ্ছে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৬শ’ কোটি ২২ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থানের সময় মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য এ বরাদ্দের কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
[৫] পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের বিশেষ মনোযোগে থাকা এ ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬শ’ ১৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরেও বড় একটি অঙ্ক বরাদ্দ থাকছে এসব প্রকল্পের জন্য। বড় অঙ্কের বরাদ্দ পেতে যাওয়া চট্টগ্রামের এ ৩ মেগা প্রকল্প হলো- মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
[৬] মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ নির্ধারণকারী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও মেগা প্রকল্পগুলো চালিয়ে যেতে চায় সরকার। সে কারণেই আগামী অর্থবছরের বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোর অনুকুলে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে যে পরিমাণ চাহিদা দেওয়া হয়েছে, ততটাই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। তারা যত বেশি খরচ করতে পারবে আমরা তত বেশিই বরাদ্দ দেবো।
[৭] এ মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২২৫ কোটি টাকা। একইভাবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা। নতুন বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বাড়ছে। এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৯৯০ কোটি টাকা। এ বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
[৮] চলতি এতগুলো বড় প্রকল্প ও বিশাল বাজেট সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে পরিকল্পিত উন্নয়নের বিকল্প নেই। গৃহীত প্রকল্পগুলোর কাজ যাতে নির্ধারিত সময়ে যথাযথ মান রেখে শেষ হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
[৯] চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো পুরোদমে চালু হলে আরও বাণিজ্যবান্ধব হবে চট্টগ্রাম। কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। সবমিলিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানীর পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সরকার চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী করতে বদ্ধপরিকর। তাই চট্টগ্রাম ঘিরে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও