সৌরভ ঘোষ: [২] বাংলাদেশ-ভারতের সীমানায় কাঁটাতার না থাকার সুযোগে দু’রাষ্ট্রের নাগরিকগণ অবাধে চলাফেরা করায় কুড়িগ্রামে বাড়ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের শঙ্কা। করোনা মোকবেলায় জেলার সরকারি বিভাগগুলো একত্রে কাজ করছে বলে জানানো হলেও সীমান্তে ঢিলেঢালা অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সীমান্তবাসীর মধ্যে নেই কোনো ভয়-ভীতি।
[৩] শনিবার (৫জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের শিমুলতলা এলাকায় ১০২১ সীমান্ত পিলার সংলগ্ন নেই কোন কাঁটাতার। কলসের আকৃতি মতোই এখানে ভারত-বাংলাদেশ আলাদা হয়েছে। এই সীমান্তে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার গোপালগঞ্জ থানার ফাইসার কুটিগ্রাম এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের ছোট খামারগ্রাম।
[৪] দীর্ঘ প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় নেই কোন কাঁটাতার। ফলে ভারতের নাগরিকগণ প্রায় সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে হাট-বাজার করে থাকেন। এই দুই গ্রামের মানুষের গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবেশির মতোই চলাফেরা চলছে। শুধুমাত্র এখানে পিলার দ্বারা দু’রাষ্টকে বোঝানো হয়েছে। এমন কাঁটাতার বিহীন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রামেও একই অবস্থা।
[৫] এখানে ভারত-বাংলাদেশের ঘর দেখে বোঝার উপায় নেই কে কোন দেশের বাসিন্দার বসতবাড়ি। বিএসএফ পাহাড়া আর সীমান্ত পিলার দিয়েই দু’দেশকে ভাগ করা হয়েছে। এই এলাকায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার দীঘলটারী গ্রাম। এখানেও নেই কোন কাঁটাতার। কাঁটাতার বিহীন এই সীমান্তে এমন চিত্র দৃশ্য দেখা যায় যেখানে দু’টি পুকুরের মাঝের পার দিয়ে দেশ ভাগ হয়ে গেছে। তবে এসব এলাকায় বিজিবি- বিএসএফ’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাদে চলাফেরা করে দু’রাষ্টের নাগরিকগণ। নেই কোনো ভেদাভেদ।
[৬] বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র তথ্য মতে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার সাথে ভারতের তিনটি রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে ২৭৮ দশমিক ২৮ কি.মি.। এরমধ্যে প্রায় ৩২ কি.মি. সীমান্তে নেই কাঁটাতার। এছাড়াও নদী পথ রয়েছে ৩১৬ কি.মি.। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম রাজ্যের সীমানায় কুড়িগ্রাম-২২ বিজিবি’র অধীনে ১৯৮ কি.মি. সীমান্ত।
[৭] জামালপুর-৩৫ বিজিবি’র আওতায় সীমানা প্রায় সাড়ে ৪৬ কি.মি. কাঁটাতার। আর ওপারে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানায় লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি’র অধীনে ৩৬ কি.মি. সীমান্ত।
[৮] কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, কুড়িগ্রাম সীমান্তবর্তী এবং বৃহৎ নদ-নদীময় জেলায় হওয়ায় এখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
[৯] তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। করোনার প্রভাব শুরুর পর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১২১৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। করোনার সংক্রমণ রোধে টিকা দেয়া হয়েছে ১ম দফায় ৪৬ হাজার ১২৮ ডোজ। এবং ২য় দফায় টিকা দেয়া হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৪৬৩ ডোজ। এছাড়াও জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন বেড- ৫০টি এবং উপজেলায় পর্যায় আরো ৫০ টি বেড প্রস্তুত রয়েছে।
[১০] কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়ন’র (বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেনেন্টে কর্ণেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা প্রভাব বিস্তারসহ চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে বিজিবি। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :