আফসান চৌধুরী: [১] ছেলেটা একাধিক যুদ্ধ করেছিলো কিন্তু মুক্তি যুদ্ধ ছাড়া কোনোটায় জেতেনি। পরে নকশাল হয়ে যায়। ১৯৭৪ এর দিকে ধরা পড়ে তারপর যা হওয়ার তাই। তবে ১৯৭৫ সালের পর অনেকে ছাড়া পেলো, সেও পায়। তারপর কোথায় ছিলো, কোথায় গেলো জানি না। তবে একদিন পরিচিত একজন এসে খবর দেয়, যে তার অবস্থা খারাপ, ক্যান্সার। আমাকে দেখতে চায়। আমার যেতে একেবারেই ইচ্ছা ছিলো না, কিন্তু তবু গেলাম। কয়েকটা আম নিয়ে গিয়েছিলাম।
[২] বন্ধুর ঘরের একটা চৌকিতে শোয়া, শরীরের চেহারা খারাপ, আমাকে দেখে হাসলো। চলে যাচ্ছি উস্তাদ, তাই শেষ দেখা। একটা কথা বলবো, মনে রেখো যদি পারো লেখো। তুমি তো আবার লেখো। আমরা হেরে গেছি উস্তাদ এটা ঠিক কিন্তু আবার জন্মালে এই একই কাজ করতাম। তারপর চুপ করে রইলো খানিক্ষণ। আর রত্নার সঙ্গে কোনোদিন দেখা হলে বলো আমাদের হতো না। আমি নীরব ছিলাম। কথা বলেনি। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো, আমাদের কারোরই বলার বাকি কিছু ছিলো না।
[৩] এরকম খুচরা মানুষ, ভেসে বেড়ানো খর কুটা দিয়ে বোধ হয় আমার উপন্যাস ‘বিশ্বাসঘাতকগণ’ নির্মিত। এক বিশাল মৃত্যুর মিছিল যেটার কোনো গন্তব্য হলো না, শুধু হাঁটলো, গেলো, এতোগুলো ভাই-বোন।
[৪] আজকে আম কিনছিলাম বাড়ির দারওয়ানের মেয়ের জন্য। হঠাৎ মনে পড়লো তার কথা। সে কী খেয়েছিলো আম শেষ বার? মাস খানেক পর মৃত্যু হয়, রত্না বলে মেয়েটার সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি পরে। আমার দুনিয়ার ওরা মানুষ ছিলো না, হটাৎ দেখা হয়ে যায় ও এইটুকুই। লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :