শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০২১, ০১:১৯ রাত
আপডেট : ৩১ মে, ২০২১, ০১:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. মঞ্জুরে খোদা: কানাডায় আরেকটি বেগমপাড়ার সন্ধান, হোক প্রতিবাদ

ড. মঞ্জুরে খোদা: কানাডার টরন্টোর হেয়ারউড সড়কের ৭৩ নম্বর বাড়ির মালিক শামীমা সুলতানা জান্নাতী। গত বছরের শুরুতে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার মানে ১২ কোটি টাকা দিয়ে তিনি এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি কিনেছেন। বাংলাদেশি পাসপোর্টে লেখা আছে তার পেশা 'গৃহবধূ’। তাহলেও কোন যাদুর বলে তিনি এ প্রাসাদের মালিক? তা আর কিছু নয়- তিনি নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী, আর কিছু লাগে? এ তো তেমন কিছু নয় কানাডার সামান্য একটি বাড়ী! এ আর এমন কি? বাংলাদেশে এর চেয়েও আলিশান প্রাসাদপ্রম বাড়ি তার আছে। আর দেশ-বিদেশে আছে অজানা অনেক অর্থ-সম্পত্তি।
অনেকেই বলেন, ভাই বেগমপাড়া কানাডার কোথায়? কানাডার টরন্টোতে এই যে শিমুল সাহেবের বেগম শামীমা যেখানে থাকেন এটাই একটা বেগমপাড়া। বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট ও পাচারকারীদের বেগম সাহেবরা যেখানে থাকেন, তাকেই বেগমপাড়া বলা হয়। এগুলোই দেশে-বিদেশে কানাডার বেগমপাড়া নামে পরিচিত হয়। প্রবাসী বাংলাদেশীরা কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একক ও গুচ্ছ বাড়ীগুলোই ঘৃণাভরে বেগমপাড়া বলে ডাকে। তেমনি গতকাল আমরা কানাডায় একটি নতুন বেগমপাড়ার সন্ধান পেয়েছি। যার মালিক শিমুল সাহেবের বেগম শামীমা।

আমরা গতবছর থেকে কানাডায়’ দেশ-বিদেশে সাড়া জাাগানো এ সব লুটেরাদের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি। কানাডা প্রবাসী ভাইবোনদের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কারবোধ গড়ে তুলেছি। বাঙালিদের যে কোন অনুষ্ঠান-আয়োজনে তাদেরকে বর্জন করা হচ্ছে। তাদের সাথে কোন প্রকার সামাজিক সম্পর্ক রাখা ঘৃণা ও লজ্জার বিষয়ে পরিণত করেছি। তাদের কাছে থেকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহন করা থেকে সবাই বিরত থাকছেন। তাদের সাথে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এড়িয়ে যাচ্ছেন সবাই। কমিউনিটির কোন বিষয়ে তাদের অংশগ্রহন-অবস্থান থাকলে তাকে আমরা বাধাগ্রস্থ করছি, প্রতিহত করছি। সম্প্রতি টরন্টোর শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটিতে থাকা দু’জন অভিযুক্ত অর্থপাচারকারীকে বাদ দিতে বাধ্য করেছি। মোটকথা কানাডায় আমরা তাদেরকে সর্বতভাবে ঘৃণা করা ও লজ্জা দেয়ার এক সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলেছি।
বলতে পারেন ভাই, দেশে তো এগুলো নিয়ে তেমন কিছু হচ্ছে না। তাহলে আপনারা কানাডায় কেন এগুলো নিয়ে এত হৈচৈ করছেন? এ আর কত টাকা? মাত্র ১৫-২০ বা ৫০ কোটি তাই না? ২, ৩, ৫ শত কোটি বা ১-২-৩-৫ হাজার কোটি টাকা তো নয়? দুই-চার হাজার কোটি যারা মেরে দিল, লুটে নিল, তাদেরই কিছু হলো না, এ আর কি হবে? প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, সে আলাপই বা কোথায়?? যারা এ কাজ করছে, তারাই তো সরকারের অংশ, কাকে কি বলছেন? ডেসটিনি, হলমার্ক, ক্রিসেন্ট, বিসমিল্লাহ, বেসিক, ফারমার, শিকদার, পিকে, পর্দা, বালিশ কত কি গেল- কোন খবর আছে? এমপি শিমুল তো কোটির তিন ঘরেই যাইনি, তাই নিয়ে এত হৈচৈ এর কি আছে?

কথা ঠিক। এমন ভাবনা আমাদের সমাজে প্রবলভাবে আছে। অন্যায় সয়ে সয়ে কোন অন্যায়ই আমাদের আর ব্যথিত করে না। অন্যায়-অনিয়ম-অনাচারই যে দেশে নিয়মে পরিণত হয় সেখানে এমন কথা কেতাবি ও দূরেরই মনে হয়। যেখানে দূর্ণীতিবাজদের রক্ষায় রাষ্ট্রযন্ত্র প্রবল ভয়ংকর হয়ে ওঠে সেখানে প্রতিবাদের কাজটা সহজ নয়। রোজিনা-কাজল-কিশোরদের কথা মাথায় এলে- কে যায় সে পথে?

তবু মাঝে মাঝে এই সিসটেমের মধ্যদিয়েও কিছু সংবাদ বের হয়ে আসে। সেগুলো নিয়ে সামান্য হৈচৈ হয় সত্য কিন্তু এগুলো নতুন কিছু নয়- এই ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বা রোগের উপসর্গ মাত্র। আমরা প্রতিদিন যা দেখি বা শুনি তা হচ্ছে হিমবাহের সে অংশ যা দূর থেকে খালি চোখে দেখা যায়। বাস্তব অবস্থা তার পরিধি, বিস্তিৃতি অনেক ভয়াবহ ও গভীর। এ কাজগুলো একজন মানুষ একা করে না, একার পক্ষে করা সম্ভবও না। একটা সিসটেম, সিডিন্ডকেট এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। লুটপাট সহযোগী-উপযোগী নেতৃত্ব বাছাই, নির্বাচন, সেই সিসটেমের মধ্যে দিয়েই হয়ে আসে। সেই অনৈতিক ব্যবস্থাতেই লুটেরা সহযোগীরা ক্ষমতার স্তরেস্তরে বসে আছে। কিন্তু এটাই কি শেষ কথা?

গতবছর সরকারের একজন মন্ত্রী কানাডার ২৬ জন অর্থ পাচারকারীর কথা স্বীকার করেছেন। বাস্তব সংখ্যা এর অনেকগুন বেশী। যে সব আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করুন। দেশের সম্পদ রক্ষায় স্বাধীন দূর্ণীতি দমন কমিশন করুন, কার্যকর আইন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করুন। জানি নীতিকথা আর উপদেশে আজ আর কাজ হয় না, তারজন্য প্রয়োজন কার্যকর প্রতিবোধ, উপযুক্ত নীতি ও শাসক। কোন একদিন এ বিচ্ছিন্নতা ও অসাড়তা কাটবে সে স্বপ্নেই কথাগুলো বলি।

আর যারা অর্থ পাচার করে কানাডাকে নিশ্চিত নিরাপদ ও সুখের ঠিকানা ভেবে আসছেন তাদের বলি, কানাডাকে আমরা কোন ভাবেই আপনাদের নিরাপদ ও শান্তির আশ্রয় হতে দেবো না। প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো অর্থ, গার্মেন্টস কর্মীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা, সাধারণ মানুষের সম্পদ পাচার করা ফুর্তির-সুখের জীবকে আমরা বাধাগ্রস্থ করবো। আর কিছু না পারি তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচন্ড ঘৃণা ও ধিক্কার জানাতে পারবো। এখানে থাকলে আজীবন তাদের লজ্জায় চোরের মত মাথা নিচু করেই থাকতে হবে। লুটেরা বিরোধী মঞ্চ, কানাডা তাদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার।

ড. মঞ্জুরে খোদা: লেখক, গবেষক, এ্যক্টিভিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়