মারুফুর রহমান অপু: আমাদেরু কয়েকটি বিষয়ে একটু ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এই ফাংগাস ভারত থেকে আসে না। একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না। ব্ল্যাক ফাংগাস আমাদের আশেপাশের পরিবেশেই আছে এবং করোনার অনেক আগে থেকেই ছিলো। এই ফাংগাসের স্পোর বাতাসে, মাটিতে ও অন্যান্য জৈব পদার্থে থাকে। নিঃশ্বাসের মাধ্যম এটি মানুষের শরীরে ঢোকে। আমাদের অনেকেই হয়তো এভাবে এই ফাংগাসের সংস্পর্শে এসেছি। কিন্তু কিছু হয়নি আমাদের, কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় না৷ তবে খুবই দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (সিভিয়ার ইমিউনো সাপ্রেশন) সম্পন্ন ব্যক্তিদের এটা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিমিত স্টেরয়েড সেবন করছেন তাদের। স্টেরয়েডকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ক্যাটেগরিতে ফেলা হয় এর বহুবিধ কার্যকারিতার কারনে তবে একইসাথে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক৷
উপজেলায় চাকরিকালীন সময়ে আমরা দেখতাম অনেক রোগী ব্যথার ওষুধ হিসেবে এটা খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাতে ব্যাথা কমলেও দেখা যেত চেহারা ফুলে চাদের মত গোল হয়ে আছে (মুন ফেস), দুর্বলতা ভর করেছে, ঘন ঘন ইনফেকশন হচ্ছে ইত্যাদি। আমরা স্টেরয়েডের হিস্ট্রি নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করতাম, শসার বিচির মতো শাদা ছোট ছোট বড়ি খান কিনা।
কোভিডে এ পর্যন্ত যতো কার্যকরি চিকিৎসা বের হয়েছে, তার মাঝে অন্যতম হলো স্টেরয়েড। তবে এটি প্রয়োগের নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া আছে। সব কোভিড আক্রান্ত রোগীকেই দেওয়া হয় না এটা। মৃদু লক্ষণের রোগে কোনোভাবেই নয়। বিশেষ কিছু সাইন সিম্পটম থাকলে কোভিড সংক্রমণের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে নির্দিষ্ট ডোজে এটি দেওয়া হয়। সমস্যা হলো আজকাল কোনো ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা গেলে নিউজ মিডিয়া আর সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে এমনভাবে প্রচারিত হয় যে রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এগুলো কিনে খাওয়া শুরু করেন।
বাংলাদেশে যেহেতু ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না তাই কৃমির ওষুধ হোক আর স্টেরয়েড হোক সবই মানুষ সোশাল মিডিয়া দেখে খাওয়া শুরু করে। কিছু অসাধু চিকিৎসকও আছেন যারা ন্যাশনাল গাইডলাইন ফলো না করে ব্যবসায়িক স্বার্থে কিংবা অজ্ঞতাবশত এইসব ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন কোনো ইন্ডিকেশন না থাকলেও৷ সুতরাং আমাদের সবাইকেই সাবধান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ওষুধই একটি সক্রিয় কেমিকেল। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিক্রিয়া করে রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই কাজটি চিকিৎসক সতর্কতার সাথে করেন (অন্তত আমরা তাই আশা করি)।
সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড, এন্টিবায়োটিক বা যেকোনো ওষুধই সেবন থেকে বিরত থাকুন এবং অবশ্যই ডায়াবেটিস বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন, খাদ্যভ্যাস ও শরীরচর্চার নিয়মাবলী মেনে চলুন। বিভিন্ন প্রতারক বা কুসংস্কারের পাল্লায় পড়ে আধুনিক চিকিৎসা বাদ দিয়ে বিকল্প চিকিৎসা নিতে গিয়ে শরীরের আরও ক্ষতি করবেন না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :